শিশুর ‘গায়ের রঙ’কে কেন্দ্র করে তালাক! তদন্তে প্রশাসন ও পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক: যশোরে এক দম্পতির বিচ্ছেদ নিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ছিল, তাদের শিশু কন্যার ‘অতিরিক্ত শ্বেত’ বর্ণ বা অ্যালবিনিজম–সদৃশ চেহারাকে কেন্দ্র করেই মা মনিরা বেগমকে তালাক দিয়েছেন স্বামী মোজাফফর হোসেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হলে প্রশাসন ও পুলিশ দুই পরিবারকে ডেকে কথা বলার উদ্যোগ নেয়।

জেলা পুলিশ সুপার রওনক জাহান জানান, বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুই পক্ষকে সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, ২০২০ সালে ভুবনডাঙ্গা গ্রামের মনিরা বেগমের সঙ্গে ফতেপুর ইউনিয়নের মোজাফফর হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের সংসারে একটি কন্যাশিশুর জন্ম হয়, যার গায়ের রঙ জন্ম থেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শ্বেত। শিশুটি জন্মের পর থেকেই মায়ের সঙ্গে বাবার বাড়িতে বড় হতে থাকে। প্রায় দুই বছর পর পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমে মনিরা–মোজাফফরের বিচ্ছেদ ঘটে। পরে মনিরা মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান। এ ঘটনায় তিনি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেননি। এদিকে তালাকের পর মোজাফফর বিদেশে, সৌদি আরবে পাড়ি জমান।

সম্প্রতি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরের কাছে সাক্ষাৎকারে মনিরা অভিযোগ করেন—শিশুর গায়ের রঙকে কেন্দ্র করেই স্বামী ও তার পরিবার সন্দেহ প্রকাশ করত, মেয়েকে ভবিষ্যতে বিয়ে দিতে ‘অতিরিক্ত খরচ’ হবে বলেও মন্তব্য করা হতো। এসব নিয়ে বিরোধের একপর্যায়ে তাকে তালাক দেয়া হয়।

ভিডিও সামনে আসার পর জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নজরে নেয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং দুই পরিবারকে নিয়ে আলোচনার সময় ঠিক করেন। পাশাপাশি সন্দেহের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রয়োজন হলে শিশুটির ডিএনএ টেস্ট করার বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে পুলিশ।

তবে মোজাফফরের বড় ভাই আবু বক্কার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিশুর গায়ের রঙ কোনো বিষয়ই ছিল না। পারিবারিক নানা বিরোধ—মনিরার দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, সংসারের কাজে অনীহা, শাশুড়ির সঙ্গে ঝামেলাসহ নানা কারণেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। তার দাবি, দুই পরিবারের সম্মতিতেই ২০২৪ সালে তালাক সম্পন্ন হয়।

অন্যদিকে মনিরা জানান, তিনি আইনি লড়াইয়ে না জড়িয়ে সংসারের সম্ভাব্য পুনর্মিলনের আশা করেছিলেন এবং সেই সময় পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউও ছিল না, তাই মামলা করেননি।

পুলিশ সুপার রওনক জাহান জানান, তালাক যেকোনো কারণে ঘটতে পারে, কিন্তু শিশুটি যেন তার শিকার না হয়—এ কারণে আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মনিরাকে থানায় আসতে বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করলে তদন্ত শুরু হবে এবং প্রয়োজন হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তথ্য ও সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Related Articles

Back to top button