ফ্লাইট অবতরণের পর শুরু হয় ট্রলি যুদ্ধ!

- দিনে ২৫ হাজার যাত্রী, কিন্তু ট্রলি মাত্র ৩,৬০০টি
- সারারাত ভ্রমণ শেষে ট্রলির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
- বিদেশে এমন দৃশ্য ভাবা যায় না, অথচ দেশে এসে ট্রলি নিয়ে ধাক্কাধাক্কি
অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রলি সংকট এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করলেও যাত্রীসেবায় থাকা ট্রলি সংখ্যা মাত্র তিন হাজার ছয়শ। ফলে একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলেই দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা।
গত বুধবার (১ অক্টোবর) ভোরে এমনই এক দৃশ্যের সাক্ষী হলো শাহজালাল বিমানবন্দর। ভোর ৪টার দিকে প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কারণে আকাশে চক্কর দিচ্ছিল পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বৃষ্টি কমলে একে একে অবতরণ শুরু হয় উড়োজাহাজগুলোর। কিন্তু ইমিগ্রেশন শেষ করে যাত্রীরা যখন লাগেজ নিতে যান, তখনই ট্রলি পাওয়া নিয়ে শুরু হয় হুড়োহুড়ি। কয়েক ডজন ট্রলি সরবরাহ করা হলে তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে শত শত যাত্রী। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয় বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে।
বিমানবন্দরের ৫ নম্বর লাগেজ বেল্টের সামনে শত শত যাত্রী লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রলির আশায়। কিন্তু দেখা মিলছিল না কোনো ট্রলির। সকাল ৬টা ৯ মিনিটে ২০–২৫টি ট্রলি সরবরাহ করা হলে শুরু হয় টানাটানি, ধাক্কাধাক্কি ও চিৎকার-চেঁচামেচি। যাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
প্রবাসী রুবেল বলেন, “সারারাত জার্নি করে এসে দেশে নেমেই ট্রলির জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো। ট্রলি পেতে মানুষ মারামারি করছে—এভাবে একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চলতে পারে না।”
আরেক যাত্রী, নোয়াখালী ইউসুফের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ট্রলির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বয়স্করা একদম কষ্টে পড়ে যায়।”
শুধু ট্রলি সংকটই নয়, ট্রলিতে লাগেজ নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে বের হতেও পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। টার্মিনাল–১ ও ২ এর ক্যানোপি অংশে ট্রলি বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেড় ফুট উঁচু স্টিলের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে ট্রলি আটকাতে। ফলে যাত্রীদের বাধ্য হয়ে কাঁধে বা মাথায় লাগেজ তুলে নিতে হচ্ছে।
সৌদি প্রবাসী আবুল বাসার বলেন, “সারারাত ভ্রমণ শেষে যখন শরীর ক্লান্ত, তখন ট্রলি নিয়ে বের হতে না পারা ভয়াবহ কষ্টের। এটি যাত্রীদের প্রতি চরম অবহেলা।”
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত ট্রলি আছে। তবে একসঙ্গে চার-পাঁচটি ফ্লাইট অবতরণ করলে ট্রলি সংকট হয়। এ চাপ কমাতে ক্যানোপির বাইরে ট্রলি নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস. এম. রাগীব সামাদ বলেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কখনও কখনও একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলে আগমনী যাত্রীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। ফলে ট্রলির চাহিদাও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে ভারী বর্ষণের সময় আগত যাত্রীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে না পারায় তাদের ব্যাগেজসহ ট্রলিগুলো খালি হতে বিলম্ব হয়। এতে স্বল্প সময়ের জন্য খালি ট্রলি পাওয়া যায় না, যার ফলে যাত্রীদের সাময়িক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। বর্তমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৩,৬০০ ট্রলি ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আরও পাঁচ শতাধিক নতুন ট্রলি সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ ধরনের সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।”
দীর্ঘদিন ধরেই শাহজালাল বিমানবন্দরে ট্রলি সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি চলছে। সরকারের একাধিক উদ্যোগের পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। যাত্রীদের প্রত্যাশা—দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এ অনিয়মের অবসান ঘটাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যেন দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সত্যিকার অর্থে “আন্তর্জাতিক মানের” সেবার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।