বাইডেনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ প্রত্যাখ্যান করলেন ২ আসামি

অনলাইন ডেস্ক: গত মাসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩৭ জন ফেডারেল বন্দির মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেছেন। তাদের মধ্যে দুই বন্দি এই দণ্ড মওকুফ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। শ্যানন আগোফস্কি এবং লেন ডেভিস নামের এ দুই বন্দি আদালতে আবেদন করেন তাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখতে।

তারা মনে করেন, মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে তাদের নির্দোষ প্রমাণের আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে। কারণ মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে আদালত বিশেষ মনোযোগ দিয়ে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে।

শ্যানন আগোফস্কি এবং লেন ডেভিস যুক্তি দিয়েছেন যে, তাদের দণ্ড মওকুফ করা হলে এটি তাদের আইনি সুবিধা কমিয়ে দেবে এবং তাদের আপিল প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাবে।

শ্যানন আগোফস্কি ১৯৮৯ সালে ওকলাহোমার একটি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড্যান শর্টের হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। পরে তিনি টেক্সাসের একটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় সহবন্দি লুথার প্ল্যান্টকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড পান। আগোফস্কি দাবি করেছেন যে, তিনি এই হত্যা মামলায় নির্দোষ এবং তিনি দণ্ড মওকুফ চান না।

লেন ডেভিস, একজন সাবেক নিউ অরলিন্স পুলিশ অফিসার, ১৯৯৪ সালে কিম গ্রোভস হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। ডেভিস দাবি করেন যে, তিনি নির্দোষ এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে ফেডারেল আদালতের কোনো এখতিয়ার ছিল না।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৩৭ জন ফেডারেল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির দণ্ড মওকুফ করেন এবং ফেডারেল স্তরে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানান। তবে তিনজন বন্দির দণ্ড মওকুফ করা হয়নি, যারা গণহত্যা বা সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

যদিও বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে এটি নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। ডেভিসের ক্ষেত্রে নিউ অরলিন্সের পুলিশের স্বাধীন পর্যবেক্ষণ অফিস বলেছে যে এটি কিম গ্রোভস এবং তার পরিবারের প্রতি অবিচার।

শ্যানন আগোফস্কির স্ত্রী লরা জানিয়েছেন, তারা এই মওকুফ বাতিল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন এবং তার স্বামী নির্দোষ প্রমাণের জন্য লড়াই করবেন। লেন ডেভিস, একজন সাবেক নিউ অরলিন্স পুলিশ অফিসার, ১৯৯৪ সালে কিম গ্রোভস হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। কিম গ্রোভস তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে ডেভিস তার লোয়ার নাইথ ওয়ার্ড এলাকার এক কিশোরকে মারধর করেছিলেন।

প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, ডেভিস একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ভাড়া করেছিলেন গ্রোভসকে হত্যার জন্য এবং তার বিরুদ্ধে গ্রোভসের নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়।

ডেভিসের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ফেডারেল আপিল আদালত বাতিল করেছিল তবে ২০০৫ সালে তা পুনরায় বহাল করা হয়। এই মামলাটি নিউ অরলিন্স পুলিশ বাহিনীর দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তৃত ফেডারেল তদন্তের অংশ ছিল।

ডেভিস, বর্তমানে ৬০ বছর বয়সী। সবসময়ই তার নির্দোষতার দাবি করেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে, নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের জন্য তার বিচার করার জন্য ফেডারেল আদালতের কোনো এখতিয়ার নেই।

মওকুফের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ

ডেভিস এবং শ্যানন আগোফস্কি উভয়ই আদালতে আবেদন করেছেন যাতে তাদের মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আজীবন কারাদণ্ডে মওকুফ করা বন্ধ করা হয়। তারা বিচারকের কাছে তাদের আইনি লড়াইয়ের জন্য একজন সহ-আইনজীবী নিয়োগের অনুরোধ জানিয়েছেন।

ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবিন মাহের বলেছেন, ফেডারেল অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেকেরই সংবিধান অনুযায়ী একটি ন্যায্য বিচার এবং আপিলের সময় আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, তা মৃত্যুদণ্ডের মামলা হোক বা না হোক।

আগোফস্কির স্ত্রী লরার মন্তব্য

শ্যানন আগোফস্কির স্ত্রী লরা আগোফস্কি, যিনি একজন জার্মান নাগরিক এবং তার স্বামীর সঙ্গে কখনো সামনাসামনি দেখা করেননি, জানিয়েছেন যে, এই মওকুফ বাতিল করা একটি কঠিন লড়াই, তবে তার স্বামী মামলার আপিল চালিয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাইডেনের নির্বাচনের পর থেকেই দণ্ড মওকুফের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলছিলাম, কারণ তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে অতীতে যে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা জানি যে, তিনি তার আইনজীবীদের সাহায্য পাবেন এবং তারা তার জন্য লড়াই করবেন।’

Related Articles

Back to top button