আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে চরম জনবলসংকট, ব্যাহত কার্যক্রম

অনলাইন ডেস্ক: প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাবাস পর্যবেক্ষণ-কেন্দ্রেগুলোতে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। দীর্ঘ ৯-১০ বছর ধরে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় আবহাওয়ার নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দক্ষ ও টেকনিক্যাল জনবল সংকট রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণকেন্দ্রগুলোতে চরম সংকট বিরাজ করছে। অনুমোদিত জনবলের অর্ধেক পদই শূন্যতা বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আবহাওয়ার তথ্যউপাত্ত সংগ্রহের জন্য দেশে দুটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ। পুরো দেশে ৬১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশন রয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে ৩৫টি পর্যবেক্ষণ স্টেশন। প্রতি ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে একটি পর্যবেক্ষণ স্টেশন থাকার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া উপজেলার মধ্যে তথ্য সংগ্রহের পর্যবেক্ষণ যন্ত্র রয়েছে। এগুলো উপজেলা প্রশাসনের লোকেরা দেখাশোনা করেন। দেশের পাঁচটি বিমানবন্দরভিত্তিক আবহাওয়া কার্যালয়, সাতটি পাইলট বেলুন পর্যবেক্ষণাগার, তিনটি রাডার স্টেশন, দুটি কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার রয়েছে। পর্যবেক্ষণ স্টেশনের কাজ হচ্ছে গত ২০১৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদগুলো পূরণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘ সময়ে অনেক বিজ্ঞ আবহাওয়াবিদ অবসরে গেছেন। কিন্তু নতুন নিয়োগ হয়নি। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানে জনবলের ব্যাপক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুল হাসান বলেন, আমাদের জনবলের চরম সংকট বিরাজ করছে। আবহাওয়ার তথ্যউপাত্য সংগ্রহের যন্ত্রপাতি থাকলেও এসব পরিচালনার জনবল নেই। নতুন জনবলের অর্গানোগ্রাম পাশ হয়েছে কিন্তু নিয়োগবিধি এখনো অনুমোদন না হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে।’
বাতাসে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোনসহ আবহাওয়ার তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন। আঞ্চলিক পর্যবেক্ষণ স্টেশন থেকে ৩ ঘণ্টা পরপর তথ্য আবহাওয়া অধিদপ্তরে পাঠাতে হয়। এতে তিন শিফটে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জনবল নেই। ইতিপূর্বে অনেকেই অবসরে চলে গেছে। কিন্তু নতুন জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ ব্যাহত হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য যন্ত্রপাতি রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিরাজমান জনবলের অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। বিরাজমান অর্গানোগ্রামে অধিদপ্তরে এক পরিচালকের পদ রয়েছে। তবে পরিবর্তিত অর্গানোগ্রামে মহাপরিচালকের পদ সৃজন করা হচ্ছে। এই অর্গানোগ্রাম অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়াকেন্দ্রের সংখ্য প্রায় ২০০ আর ম্যানুয়াল পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ৫৮টি। এসব কেন্দ্রে টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল জনবল ১ হাজার ৩০০ জন। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৬০৯ জন। আবহাওয়াসংক্রান্ত বিষয়গুলো টেকনিক্যাল। এখানে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ব্যবহার রয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরগুলোতে প্রধান পদে নির্বাচনের কিছু নিয়মকানুন বেঁধে দিয়েছে। এই নিয়মে যিনি সংস্থা শীর্ষ পদে মনোনীত হবেন তাকে আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রযুক্তিগত বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে। কিন্তু নিয়োগবিধি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ৭৭টি পদের মধ্যে ৫৯টি পদ শূন্য। সিলেটের ৯১টি পদের মধ্যে ৩৯টি, মৌলভী বাজারে ১৫টি পদের মধ্যে ১৪টি, কুমিল্লায় ২০টি পদের মধ্যে ১৮টি, কক্সবাজারে ৫১টি পদের মধ্যে ৩৯টি, সেন্টমার্টিনে আটটি পদের মধ্যে সাতটি, পটুয়াখালী খেপুপাড়াকেন্দ্রে ২২ কর্মকর্তার মধ্যে আছেন ৭ জন।




