সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি সরকারি পরিবহন পুলে হস্তান্তর

অনলাইন ডেস্ক: বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের আমদানি করা ৩১টি শুল্কমুক্ত বিলাসবহুল গাড়ি সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের (জিওডি) পরিবহন পুলে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে গাড়িগুলো খালাস না হওয়ায় জনস্বার্থে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য এগুলো জিওডির অধীনে নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিশেষ আদেশ জারির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে গাড়িগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে (ডিজিটি) হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার এইচ এম কবির বলেন, ‘এ পদক্ষেপের ফলে নতুন গাড়ি কেনায় সরকারি ব্যয় কমবে এবং বন্দরে পড়ে থাকা গাড়িগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও দূর হবে।’

কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গাড়িগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্দর এলাকায় পড়ে থেকে বাজারমূল্য হারাচ্ছিল। নিলামেও উচ্চক্ষমতার বিলাসবহুল গাড়িগুলোর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম ছিল।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস এসব গাড়ি নিলামে তোলার উদ্যোগ নেয়। প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রায় ৯ কোটি টাকার সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়। তবে নিলামকারীদের সর্বোচ্চ বিড ২ কোটি টাকার নিচে থাকায় ওই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

পরবর্তীতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে গাড়িগুলো সরকারি পরিবহন পুলে হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়। পরে অর্থ বিভাগ ওই সুপারিশ অনুমোদন দেয়। সরকারি নথি অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট থেকে বন্দরে সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যয় বহন করবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।

এর আগে এনবিআর স্পষ্ট জানায়, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সাবেক এমপিদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা আর প্রযোজ্য থাকে না। ফলে গাড়িগুলো খালাস করতে হলে আমদানিকারকদের প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে।

এনবিআরের হিসাবে, ওই ৩১টি গাড়ির মোট শুল্ক ও করের পরিমাণ ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এসব গাড়ির প্রতিটির শুল্ককর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা পর্যন্ত।

প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ না করায় ২০২৩ সালের কাস্টমস আইন-এর ৯৪(৩) ধারা অনুযায়ী গাড়িগুলো নিলামে তোলা হয়।

তবে এনবিআরের বিশেষ আদেশে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক প্রযোজ্য শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে চান, তাহলে আইন অনুযায়ী গাড়িগুলো তাদের অনুকূলে খালাস করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর গাড়িগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেবে।

১৯৮৭ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময় চালু হওয়া, সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগটি দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত হয়ে আসছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে এই সুবিধার কারণে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকারও বেশি।

Related Articles

Back to top button