‘আমি তাড়াহুড়ো করতে চাই না’

অনলাইন ডেস্ক: এক কালের জনপ্রিয় মালয়ালম অভিনেত্রী মেনেকা ও প্রযোজক সুরেশ কুমারের কন্যা কীর্তির শৈশব কেটেছে বিনোদন দুনিয়াতেই। মাত্র আট বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে পর্দায় প্রথম পা রাখেন। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা—দুই জায়গাতেই ধীরে ধীরে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। তবে নায়িকা হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ২০১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ সিনেমায়। সেই সময়েই বোঝা গিয়েছিল, কীর্তির মধ্যে কিছু বিশেষ আছে। কিন্তু তাঁকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচনায় নিয়ে আসে ২০১৮ সালের তেলুগু ছবি ‘মহানতি’।
দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র জগতে তাঁকে বলা হয় নতুন ‘লেডি সুপারস্টার’। অভিনয়ের সূক্ষ্মতা, সংলাপ প্রক্ষেপণ, অভিব্যক্তি—সব দিক থেকেই তিনি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। জাতীয় পুরস্কারের স্বীকৃতি আগেই এসেছে তাঁর ঝুলিতে। এখন লক্ষ্য—বলিউডে নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করা। তিনি কীর্তি সুরেশ। সম্প্রতি ‘এলে ম্যাগাজিন’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অভিনয়জীবন, চ্যালেঞ্জ আর বলিউডে নতুন যাত্রা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
এই জীবনীভিত্তিক ছবিতে কিংবদন্তি অভিনেত্রী সাবিত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কীর্তি। সাবিত্রীর মতো জটিল, বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বকে পর্দায় জীবন্ত করে তোলা সহজ ছিল না, কিন্তু কীর্তি সেটি করেছিলেন অসাধারণ মুনশিয়ানায়। তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শক ও সমালোচক উভয়েই। ‘মহানতি’ তাঁকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং সর্বভারতীয় খ্যাতি। ছবিটি বক্স অফিসেও দারুণ সফল হয়। এরপর তিনি ‘রং দে’, ‘থেরি’, ‘দসারা’র মতো ছবিতে অভিনয় করে নিজের বহুমাত্রিকতা প্রমাণ করেছেন।

কীর্তি সুরেশছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
পুনরাবৃত্তি নয়
দীর্ঘ ১২ বছরের ক্যারিয়ারে কীর্তি কখনোই নিজেকে একধরনের চরিত্রে সীমাবদ্ধ রাখেননি। কখনো প্রেম, কখনো বেদনা, কখনো আবার অন্তর্দ্বন্দ্ব—প্রতিটি চরিত্রেই নিজের অভিনয় প্রতিভাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে কীর্তি বলেন, ‘“মহানতি”–এর সাফল্যের পর অনেক জীবনীমূলক ছবির প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি সেগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি। আমি চাইনি দর্শক আমাকে কেবল একধরনের চরিত্রেই দেখুক। আমার বিশ্বাস, একজন অভিনেত্রীর কাজ হলো নিজেকে বারবার ভাঙা ও নতুন করে গড়া। তাই আমি ঝুঁকি নিতে ভয় পাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একই রকম চরিত্রে অভিনয় করলে নিরাপদ থাকা যায়, কিন্তু তাতে বিকাশ ঘটে না। আমি চাই প্রতিটি ছবিতে নিজেকে নতুনভাবে দেখতে, নতুনভাবে প্রমাণ করতে। দর্শক যেন ভাবতে না পারেন—এই চরিত্রে কীর্তি আগেও ছিলেন।’
ভিন্ন সংস্কৃতিতে নতুন অভিযাত্রা
দক্ষিণ ভারতে একাধিক ভাষায় কাজ করলেও কীর্তির সাম্প্রতিক ফোকাস এখন বলিউড। কারণ তাঁর মতে, ‘ভারতীয় চলচ্চিত্রের পরিসর যত বিস্তৃত হচ্ছে, ভাষার দেয়াল তত ভেঙে যাচ্ছে।’ বরুণ ধাওয়ানের বিপরীতে ‘বেবি জন’ ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন কীর্তি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন কালীস, আর এই কাজের অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে ছিল একেবারেই নতুন।

কীর্তি সুরেশছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
‘বলিউডের পরিবেশে এসে বুঝেছি, এখানকার কাজের ধরন অনেকটা আলাদা,’ বলেন কীর্তি। ‘যে ইন্ডাস্ট্রিতে আমি বড় হয়েছি, সেখানে সময়ের ছন্দ, লোকজনের মনোভাব সবকিছুই একটু ভিন্ন। কিন্তু এই পার্থক্যই আমাকে শিখতে সাহায্য করছে। নতুন মানুষ, নতুন চিন্তা, নতুন সংস্কৃতি—সব মিলিয়ে এটা আমার জন্য এক সুন্দর যাত্রা।’

কীর্তি সুরেশছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
কীর্তি আরও বলেন, ‘আমি এই প্রক্রিয়াটা উপভোগ করছি। এখানকার টিমওয়ার্ক, প্রস্তুতির ধরন, এমনকি শুটিং ইউনিটের আচরণও অনেক শিক্ষণীয়। বলিউডে কাজের মানসিকতা অনেক পেশাদার, তবু বন্ধুত্বপূর্ণ। আমি তাড়াহুড়ো করতে চাই না। বরং সঠিক সময়ে সঠিক চরিত্রে যুক্ত হতে চাই।’

কীর্তি সুরেশছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
নতুন প্রজেক্টে ব্যস্ততা
বলিউডে এখন কীর্তির হাতে একাধিক প্রকল্প। যশরাজ ফিল্মসের রিভেঞ্জ–থ্রিলার সিরিজ ‘আক্কা’তে অভিনয় করবেন তিনি, যেখানে দেখা যাবে এক জটিল নারী চরিত্রে তাঁকে। পাশাপাশি রাজকুমার রাওয়ের বিপরীতে নতুন এক ছবিতে জুটি বাঁধছেন কীর্তি, যা প্রযোজনা করবেন রাজকুমার ও তাঁর স্ত্রী পত্রলেখা। শোনা যাচ্ছে, রণবীর কাপুরের সঙ্গে একটি রোমান্টিক ছবিতেও দেখা যাবে তাঁকে। অন্যদিকে তাঁর তামিল সিনেমা ‘রিভলভার রীতা’ মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

কীর্তি সুরেশছবি: অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে
সব মিলিয়ে কীর্তি সুরেশ এখন এমন এক পর্যায়ে, যেখানে দক্ষিণ ও বলিউড—দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই সমান স্বচ্ছন্দে কাজ করছেন। তাঁর আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে যেন একটাই বার্তা, ‘ভাষা আলাদা হতে পারে, কিন্তু শিল্পী হিসেবে সীমান্ত মানতে আমার আপত্তি নেই।’
অভিনয়ের প্রতিটি ধাপে নতুন করে জন্ম নিচ্ছেন তিনি—একজন পরিণত, আত্মবিশ্বাসী, সর্বভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে।




