বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কর অবকাশের শর্ত শিথিল

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) এবং হাই-টেক পার্কে পুরোনো বা বিদেশে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও এখন থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন। এতদিন এই সুবিধা পেতে হলে শুধু নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ছিল, যা অনেক বিনিয়োগকারীর জন্য বড় একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানিয়েছে, বর্তমানে বেজা ও হাই-টেক পার্কের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট ১২টি শর্ত মেনে ১০ বছরের জন্য বিভিন্ন হারে কর অবকাশ সুবিধা পেয়ে থাকে। এই সুবিধার কারণেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হন। তবে একটি বড় বাধা ছিল, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রায়শই তাদের নিজ দেশের পুরোনো যন্ত্রপাতি এনে এখানে ব্যবহার করতে চাইতেন। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শর্ত অনুযায়ী, ইজেড ও হাই-টেক পার্কে কর অবকাশের সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হতো। এই শর্তের কারণে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হচ্ছিলেন।
এ কারণেই সরকার হাই-টেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশের শর্ত শিথিলের উদ্যোগ নিয়েছে। বিডার মূল দায়িত্ব যেহেতু বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, তাই তারা এনবিআরকে এই শর্ত শিথিলের জন্য চিঠি দিয়েছিল।
এনবিআর সূত্র অনুযায়ী, আগে একটি শর্ত ছিল যে, ইতিপূর্বে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে এরূপ কোনো মেশিন ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কের কোনো শিল্প ইউনিট স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে না। এই শর্তে বিদেশি ব্যবসায়ীদের আপত্তি ছিল। তাই ২০২৪ সালের দুটি প্রজ্ঞাপনে এই শর্তে সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনে ‘ইতিপূর্বে’ শব্দের আগে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন শর্তটি দাঁড়াচ্ছে ‘বাংলাদেশে ইতিপূর্বে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়েছে এমন কোনো মেশিন, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ইজেড ও পার্কের কোনো শিল্প ইউনিট স্থাপনে ব্যবহার করা যাবে না।’ এর সহজ অর্থ হলো, যদি বাংলাদেশে ব্যবহৃত কোনো যন্ত্রপাতি পুনরায় ব্যবহার করা হয়, তবে করছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে না। তবে বিদেশ থেকে আনা পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে কর ছাড়ের সুবিধা মিলবে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপানি বিনিয়োগকারীরা বিশেষ করে পুরোনো মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে এই শর্ত শিথিলের জন্য বিডার কাছে বারবার অনুরোধ করেছিলেন। তাদের অনেক বড় বড় কারখানা রয়েছে এবং তারা সেই দেশ থেকে পুরোনো যন্ত্রপাতি এনে বাংলাদেশে স্থাপন করা কারখানায় ব্যবহার করতে চান। এতে তাদের খরচ অনেক কমে যায়। বিডার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে শর্তটি শিথিল করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেবল এই একটি সিদ্ধান্তই বড় আকারের বিনিয়োগ প্রবাহ নিশ্চিত করবে না। তাদের মতে, একটি স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি নীতি, উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক স্থিরতা বজায় রাখা দরকার।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০২৫’ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের চেয়ে ১৩% কমেছে। গত বছর নিট বা প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার, যেখানে ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর তথ্য কিছুটা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। বিডা জানিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত আট মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মোট ৭৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। এই সময়ে বিডায় মোট ৭৩৯টি শিল্প প্রকল্প নিবন্ধিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬টি শতভাগ বিদেশি এবং ৬১টি যৌথ বিনিয়োগের প্রকল্প।