গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুর্গ বিজয়ে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

অনলাইন ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতিতে ভোট নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ভোটারদের মধ্যে নানা সংশয় ও সন্দেহের দোলাচল রয়েছে। তারপরও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ জেলার তিনটি আসনে নির্বাচনি হাওয়া বাইছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ ও কর্মী সমাবেশসহ নির্বাচনি তত্পরতা অব্যাহত রেখেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা এটি। স্বাধীনতার পর প্রায় সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তিন আসনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তাই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় এ জেলার তিনটি আসনে বিজয়ী হতে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নির্বাচনি মাঠে তত্পর রয়েছেন।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ছবিসহ শুভেচ্ছার ব্যানার ও পোস্টার টানিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। তারা কর্মী সমাবেশ, জনসভা, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও উঠান বৈঠকের পাশাপাশি ধর্মীয় সভায় যোগদানসহ উত্সবে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন।

আগামী নির্বাচনে গোপালগঞ্জের সবকটি আসনই এককভাবে নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি। জামায়াতও তাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আগে থেকেই তত্পরতা চালাচ্ছে। তিনটি আসনেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত গোপালগঞ্জ থেকে কোনো আসন পায়নি। তারপরও সর্বশক্তি দিয়ে সব আসনে ভাগ বসাতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। হিন্দু (সনাতন) ধর্মাবলম্বীসহ আওয়ামী লীগের ভোট বাগিয়ে নিতে সব ধরনের কৌশল নিয়েছে জামায়াত ও বিএনপি। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলন, গণফোরাম, জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপিসহ অন্য দলও আসনগুলোতে তাদের প্রার্থীরাও তত্পরতা চালাচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানীর একাংশ): এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকেই নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। সভা-সমাবেশ করছেন। যোগ দিচ্ছেন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উঠান বৈঠকে, করছেন কর্মিসভা। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে সভা করছেন। হাট-বাজার, বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ, ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও ভোটারদের কাছে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাইছেন।

এ আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন জমিয়াতুল মুফাসছিরিন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল হামীদ। তিনি বিজয়ী হতে নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দলীয় রুটিন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাড়তি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, জাকের পার্টির দেলেয়ার হোসেন, গণফোরামের আনোয়ার ইব্রাহিম ও এনসিপির ইসতিয়াক আজিম। এছাড়া এস আনিসুল ইসলাম ভুলু ও ব্যবসায়ী কায়ূম খান এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইছেন ।

গোপালগঞ্জ-২ (গোপালগঞ্জ সদর-কাশিয়ানীর একাংশ): এ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. কে এম বাবর আলী দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিছিল, মিটিংয়ের পাশাপাশি করছেন গণসংযোগ। যোগ দিচ্ছেন উঠান বৈঠকসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশে। গোপালগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নয়ন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে বঞ্চিত পাঁচ নেতার ব্যানারে গত ২৭ নভেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এইচ খান মঞ্জু, সাবেক সভাপতি এম সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান তাজ গোপালগঞ্জ শহরে শোডাউন করেছেন। এছাড়া বিএনপি নেতা এম এইচ খান মঞ্জু, এম সিরাজুল ইসলাম সিরাজ গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ইউনিট সদস্য ও সাবেক গোপালগঞ্জ জেলা আমির অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন সরদারকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থিতা ঘোষণার পরই তিনি শিডিউল অনুয়ায়ী দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচিত হতে ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মাও. তসলিম হুসাইন শিকদার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। জাকের পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান। গণফোরাম থেকে এ আসনে শাহ মফিজ প্রার্থী হবেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ-৩ আসন (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া): এ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে জয়-পরাজয়ে হিন্দু (সনাতন) ভোটার ফ্যাক্টর হবে। তাই টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া উপজেলার হিন্দু ভোটারদের মন জয় করতে তিনি নিয়মিত হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে যাচ্ছেন। সম্প্রীতি সমাবেশ করে চলেছেন। যোগ দিচ্ছেন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাইছেন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার আমির অধ্যাপক এম এম রেজাউল করিমকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনি এলাকায় নিয়মিত শোডাউন, গণসেংযোগ, উঠান বৈঠক করে চলেছেন। যোগ দিচ্ছেন ওয়াজ মাহফিল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে। উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি দাঁড়িপাল্লায় ভোট চাইছেন।

ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মারুফ শেখকে এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী করা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ থেকে এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সংগঠনের কোটালীপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল বাশার দাড়িয়া। এনসিপির জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আরিফুল দাড়িয়া এ আসন থেকে নির্বাচন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে। এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইছেন অ্যাডভোকেট মো. হাবিবুর রহমান।

Related Articles

Back to top button