খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা বিলম্বিত হচ্ছে

- শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত
- গতকালও পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে
- দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে আছেন
অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিত্সাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তেমন কোনো উন্নতি হয়নি, অবনতিও হয়নি। গতকাল রবিবার দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। তাতে খুব একটা পরিবর্তন অবলোকন করেননি চিকিৎসকরা। তার মেডিক্যাল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো বিমানযাত্রার সক্ষমতা অর্জন করেননি। সেজন্যই লন্ডনযাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ৯-১০ ডিসেম্বরের দিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা উপযুক্ত হলে লন্ডন নেওয়া হতে পারে। এদিকে চিকিত্সাধীন শাশুড়ি খালেদা জিয়ার শয্যা পাশে থেকে স্বাস্থ্যসেবাসহ সার্বিক তদারকি করছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান।
গতকাল রাতে মেডিক্যাল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার উন্নতি কিংবা অবনতি কিছুই বলা যাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গত শুক্রবারই লন্ডনে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। এখন যে অবস্থায় আছেন, তাতে তার জন্য বিমানযাত্রা উপযুক্ত নয়। তারপরেও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আনা হচ্ছে, ঐ সময়ে যদি ম্যাডামের কিছুটা উন্নতি হয় তাহলে লন্ডন নেওয়ার পক্ষে চিকিৎসকরা মত দেবেন।
২৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ২৭ নভেম্বর থেকে ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় তিনি ঐ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলেও চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে সর্বোচ্চ চিকিত্সা চলছে তার।
এদিকে গতকাল রবিবার রাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স মঙ্গলবার ঢাকায় আসার নির্ঘণ্ট চেয়েছে। ঐ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ইতিমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল ঢাকায় আসবে অ্যাম্বুলেন্সটি।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে নিতে মঙ্গলবার ঢাকায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসবে, পরদিন ঢাকা ত্যাগ করবে। ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে এ ফ্লাইটের ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সব ধরনের নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ড সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখনই উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সেজন্যই উনার বিদেশ যাওয়া বিলম্বিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো তার শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে, উনাকে কখন বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সব সময় প্রস্তুত আছে। কিন্তু প্রস্তুত থাকলেও উনার চিকিত্সাগত দিকে থেকে নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রাধান্য পাচ্ছে। মেডিক্যাল বোর্ডসহ যুক্তরাজ্য ও চীন থেকে আসা চিকিৎসকেরাও উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে রবিবারও সারা দেশে দোয়া ও মোনাজাত করেছে বিএনপি। তবে এদিন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় দলটির নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যায়নি।
৮০ বছর বয়সি খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হূদেরাগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিত্সার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিত্সাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা নেন। যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিত্সা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন বেগম খালেদা জিয়া।




