‘মোন্থার’ প্রভাবে টানা বর্ষণ: ডুবেছে ফসলি জমি, ভেসে গেছে মাছ

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর তানোর, কিশোরগঞ্জের নীলফামারী, দিনাজপুরের হাকিমপুরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় টানা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ভেসে গেছে ঘেরের মাছ।

কৃষকরা বলছেন, দীর্ঘ আগে লাগানো রোপা-আমন ধানের রং সোনালি হয়ে এসেছিল। তবে ফসল ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তেই টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে জমেছে পানি। জমি থেকে পানি দ্রুত না নামলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

টানা বর্ষণে প্লাবিত তানোর

ইত্তেফাকের রাজশাহী অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি গ্রামীণ রাস্তা ও পুকুর খালে উপচে রাজশাহী তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া, কামারগাঁ, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌর এলাকার বিলের রোপা আমন পাঁকা ধান ডুবে গেছে।

ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেন, শনিবার সকালে বৃষ্টি থামলেও আকাশে প্রচন্ড মেঘ। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, সারা বছরে, এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। নিচু ফসলি জমিগুলো ডুবে গেছে। ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন রোপা আমন চাষিরা। শুধু রোপা আমনের ক্ষতি নয়, শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। টানা বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, কামারগাঁ ব্লকের কামারগাঁয় ৩০ হেক্টর, মাদারিপুরে ৮ হেক্টর, ছাঐড়ে ১৪ হেক্টর, কৃষ্ণপুরে ৫ হেক্টর ও পাঁচন্দর ব্লকের মোহাম্মদপুরে ৭ হেক্টর, চাঁদপুরে ১০ হেক্টর এবং চান্দুড়িয়া ব্লকের চান্দুড়িয়ায় ১৫ হেক্টর, সিলিমপুরে ৫ হেক্টর, তানোর পৌরসভার ১১০ হেক্টর মিলে ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান ইতোমধ্যে ডুবেছে। এরমধ্যে আংশিক ডুবেছে ১৫৭ হেক্টর এবং পুরোপুরি ডুবেছে ৪৬ হেক্টর জমির রোপা আমন।

উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, উপজেলায় রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। তবে ধান ডুবেছে পুরোপুরি ভাবে ৪৬ হেক্টর এবং আংশিক ডুবছে ১৫৭ হেক্টর জমি। অবশ্য বৃষ্টির থামলে সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে। যেসব জমি ডুবেছে ও পানি ঢুকেছে সেসব জমি থেকে তিন চার দিনের মধ্যে পানি বের হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় পার হলে ধান নষ্ট হবে।

কিশোরগঞ্জে তলিয়েছে সবজি ক্ষেত

নীলফামারী সংবাদাতা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে রোপা-আমন ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমিতে পানি জমে আগাম আল, ফুলকপিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি দপ্তর বলছে যদি আজকালের মধ্যে বৃষ্টির প্রবণতা কমে আসে তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম আর বৃষ্টি না কমলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ হাজার ৯শ ২ হেক্টর জমিতে আমন ধান, ৬ হাজার ৬শ ৬০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু ও ১০৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপিসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমির ধান কাঁটা মাড়াই হয়ে গেছে। বাকি যে ধান জমিতে রয়েছে সেখান থেকে ৬শ হেক্টর জমির ধানক্ষেত অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতে নুইয়ে পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যেসব ধান পরিপক্ব হয়ে গেছে, সেগুলো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।

তবে যদি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে ৩শ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকলে ফুলকপি ও আলুক্ষেতের বীজও নষ্ট হতে পারে।

নিতাই ইউনিয়নের সবজি চাষি আনারুল মিয়া বলেন, ১৩ শতক জমিতে ফুলকপি ও ২৭ শতক জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে আলুক্ষেত নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। এছাড়াও ফুলকপি ক্ষেতেও পানি জমে ছিল, পরে সেচ দিয়েছি।

বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রামের আলু চাষি বকুল মিয়া বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। গত পাঁচ দিনের পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে জমি পানিতে না ডুবলেও জমি অতিরিক্ত ভেজা রয়েছে। বৃষ্টি না থামলে সব আলু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দিনাজপুরে হেলে পড়েছে সোনালি ধান

দিনাজপুরের হাকিমপুর সংবাদদাতা জানিয়েছেন, দুইদিন ধরে বৈরি আবহাওয়া ও বৃষ্টির কারণে হেলে পড়েছে। নিচু এলাকার অনেক মাঠে ধানগাছ তলিয়ে গেছে। ফসল ঘরে তোলার আগ মূহুর্তে টানা বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তা আর হতাশায় পড়েছেন উপজেলার শত শত কৃষক।

স্থানীয় কৃষক একাব্বর আলী জানান, এই অবস্থায় ধান কেটে নিলেও শুকানো যাবে না। ফলে ভেজা ধান ঘরে তোলা মুশকিল আছে। রোদ না হলে এমন আবহাওয়া আরও কিছুদিন থাকলে আমরা আবাদে যে টাকা ব্যয় করেছি তা উঠানো সম্ভব হবে না। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার আরও কয়েকজন কৃষক জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে এখন সেই ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে নিচু জমির ফসল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. আরজেনা বেগম জানান, এই কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও বাতাসে উপজেলার কিছু এলাকায় আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করছেন। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তারা যাতে অন্তত কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন।

Related Articles

Back to top button