ভুয়া অফিসে চাকরি-ব্যবসার ফাঁদ: অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল চক্র, গ্রেপ্তার ৩

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার উত্তরা এলাকায় ভুয়া অফিস খুলে উচ্চ বেতনের চাকরি এবং ঘড়ি আমদানি–রপ্তানি ব্যবসার লোভ দেখিয়ে অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড়ের মালিটোলা পার্ক এলাকা থেকে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি)।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—সনজ সাহা ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরী (৫৬), মোশারফ হোসেন (৬৪) এবং মো. শাহজাহান (৪৬)।

ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, ভুক্তভোগী বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর প্রতারক চক্রের সদস্য জনৈক আব্দুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি তাকে উচ্চ পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে উত্তরা এলাকার একটি অফিসে ডেকে নেন।

সেখানে ‘বিসিজে (বাংলাদেশ–চায়না–জাপান)’ নামের কথিত একটি গ্রুপে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ২,৫০০ মার্কিন ডলার মাসিক বেতনে পরিচালক পদে নিয়োগের জন্য বাদীর সঙ্গে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাকে লাভজনক একটি ব্যবসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এ সময় আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ভারতের একটি কোম্পানির প্রতিনিধি পরিচয় দেন এবং আমিনুল ইসলাম নামে আরেকজন নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক দাবি করেন। তারা ঘড়ি আমদানি–রপ্তানি ব্যবসায় অংশ নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এসব ছিল একটি সম্পূর্ণ কল্পিত ব্যবসা, যার ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হন তিনি।

এভাবে চাকরির পাশাপাশি ভারতীয় কোম্পানির কাছে ঘড়ি সরবরাহের মাধ্যমে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়। ব্যবসায় বিনিয়োগ ও মুনাফা ভাগাভাগিতে তাদের মধ্যে একটি মৌখিক চুক্তিও হয়।

গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, তারা বাদীর কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোট ৪৫ লাখ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘড়ি কেনার পর ভারতীয় কোম্পানিটির নিকট উচ্চমূল্যে বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে তারা এই প্রতারণা করেন মর্মেও স্বীকার করেন।

কিন্তু প্রতারকরা অর্থ গ্রহণের পর ভুক্তভোগী বাদীকে জানায় যে, ঘড়ি সরবরাহ সম্ভব হয়নি এবং পক্ষান্তরে আরও ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন যে, তিনি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্রের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগী চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ডিএমপির তুরাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, মামলাটির তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, প্রতারক চক্রটি অবসরপ্রাপ্ত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের টার্গেট করে চাকরি দেওয়ার নাম করে ও ব্যবসায়িক প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে। এই চক্রের সদস্যগণ প্রতিটি অপরাধ সংঘটনের সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে এবং অপরাধ শেষ হয়ে গেলে সেসব ডিভাইস নষ্ট করে ফেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছেন মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। তদন্তাধীন এ মামলা ছাড়াও সনজ সাহা ওরফে উজ্জ্বল চৌধুরী নামে ১৩টি, মোশারফ হোসেনের নামে ৩টি এবং শাহজাহানের নামে ২টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়, প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম বর্তমানে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিট পরিচালনা করছে। গ্রেপ্তারদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দকরণ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Related Articles

Back to top button