আমদানি-রপ্তানিতে ভাটা জোয়ার ঘুষ-বাণিজ্যে

কমেছে আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী পারাপার, ‘স্পিডমানি’ নামে ঘুষের মহোত্সব, পদে পদে হয়রানির শিকার বন্দর ব্যবহারকারীরা, পণ্য চুরির অভিযোগ, ক্রেন ও ফর্কলিফটের সমস্যা, আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল ব্যবহূত হচ্ছে বন্দর  কর্তৃপক্ষের অফিস হিসেবে, যাত্রীরা থাকেন খোলা আকাশের নিচে

অনলাইন ডেস্ক: দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। শার্শা উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের নাম বেনাপোল। এই গ্রাম থেকে স্থলবন্দরের দূরত্ব এক কিলোমিটারের বেশি। ছোটআঁচড়া ও বড়আঁচড়া গ্রামে অবস্থান বেনাপোল স্থলবন্দরের। এখানকার বিজিবি ক্যাম্প বড়আঁচড়ায়। চেকপোস্ট সাদীপুর গ্রামে। আবার কাস্টম হাউজ ছোটআঁচড়া মৌজায় অবস্থিত। বেনাপোল কাস্টম হাউজের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ১৯৪৭ সালে এখানে প্রথম একটি চেকপোস্ট উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে তখন মাত্র কয়েক জন সীমান্ত অতিক্রম করতো; তাদের বেশির ভাগই ছিল স্থানীয় বাসিন্দা।

বর্তমানে এটি একটি আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এবং বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার যাত্রী এই চেকপোস্ট ব্যবহার করে আসা-যাওয়া করেন। ২০০০ সালে বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে এই স্থলবন্দরকে ধীরে ধীরে আধুনিকায়ন করা হয়। পরবর্তীতে দুদেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি বাড়তে থাকলে পূর্ণাঙ্গ কমিশনারেটে পরিণত করা হয়। বর্তমানে বেনাপোল কাস্টম হাউজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ স্থলবন্দর কাস্টম হাউজ। এটি শুধু রাজস্ব আদায় নয়, বরং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ, পণ্য যাচাই, এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সহজীকরণের দায়িত্বও পালন করে। রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘কী পয়েন্ট ইন্স্টলেশন’ বা কেপিআই-এর অন্তর্ভুক্ত এই বন্দর।

রাজস্ব বাড়লেও কমছে আমদানি-রপ্তানি : দূরত্ব কম ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাংলাদেশি বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। ৮০-র দশকেও এই বন্দর দিয়ে শতকোটি টাকার রাজস্ব আয় হতো। কালে কালে এর ব্যাপ্তি বেড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে বছরে পণ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকার প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউজের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার বেশি ৭ হাজার ২১.৫১ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা ৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনিক কঠোরতা আর বিভিন্ন বাহিনীর তত্পরতার কারণে বন্দরটি ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। শুল্ক আরোপে কাস্টমসের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ‘বিশেষ সুবিধা’ গ্রহণ করতে না পারায় অন্য বন্দরমুখী হয়েছেন বলে আলোচনা আছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ পথে যাতায়াত করেছেন ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৪১০ জন। আর ফিরেছেন ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। এ থেকে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ রুটে যাতায়াত করেছেন ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৮ জন। রাজস্ব এসেছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। অর্থাত্ এক বছরে যাত্রী কমেছে ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭ জন। আর রাজস্ব কমেছে ৯০ কোটি। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন পণ্য। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা নেমে দাঁড়ায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার ২৮১ মেট্রিক টনে। অর্থাত্ গেল বছরে আমদানি কমেছে ৭৩ হাজার ৯৪৭ মেট্রিক টন। একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৭৫০.১৪ মেট্রিক টনে।

খাদ্যপণ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে :পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে চাল আমদানি বাড়লেও কমেছে গম, ডাল পেঁয়াজ ও মরিচসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের আমদানি। এতে খাদ্যদ্রব্য জাতীয় ভোগ্যপণ্যের বাণিজ্য ঘাটতি ৭৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল, রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি ও নানা শর্তের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে ভারতের সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় ৮টি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কোটা চুক্তি তিন বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা কারণ জানিয়ে দেশটি হঠাত্ হঠাত্ আমদানি বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা, রপ্তানি মূল্যবৃদ্ধি ও কঠিন কঠিন শর্ত দেওয়ায় দিন দিন বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে সুযোগ নিচ্ছে অসত্ ব্যবসায়ীরা, যার খেসারত গুনতে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০২২ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে কোটা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে ভারতের কাছে বার্ষিক ৪৫ লাখ টন গম, ২০ লাখ টন চাল, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১৫ লাখ টন চিনি, দেড় লাখ টন আদা, ৩০ হাজার টন ডাল ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়। তবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে প্রতিবছর ঘাটতি বাড়ছে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, সরকার পরিবর্তন আর আমদানি জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। রেলে রপ্তানি পণ্য পরিবহনের নির্দেশ থাকলেও বেনাপোল দিয়ে আজ পর্যন্ত তা চালু হয়নি। রেল স্টেশনে নির্মাণ হয়নি কোনো ইয়ার্ড। নানা প্রতিবন্ধকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে মাত্র ১,২৯৬টি ওয়াগনে আমদানি হয়েছে ১২ হাজার মোট্রিক টন পণ্য।

নানা সমস্যায় জর্জরিত :আমদানি-রপ্তানির প্রধান সূতিকাগার হলেও সমস্যার রাহুমুুক্ত হতে কোনোদিনই পারেনি বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১০২.৯৯ একর আয়তনের বন্দরটির পণ্য ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। ৩৩টি ওয়্যারহাউজ, ৫টি ইয়ার্ড ছাড়াও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, ২ হাজার ট্রাক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, সমপরিমাণ ধারণক্ষমতার একটি রপ্তানি টার্মিনাল, টিটিবি-তে প্রায় সাড়ে ৩০০ চেসিস রাখার ব্যবস্থা, ৭টি ওয়েব্রিজ স্কেল রয়েছে বন্দরে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আসলেও সেই তুলনায় শেডের স্বল্পতা রয়েছে। আবার যেসব শেড রয়েছে, তার বেশির ভাগই জরাজীর্ণ, ব্যবহার অনুপযোগী। নির্দিষ্ট পণ্য নির্দিষ্ট শেডে রাখার নিয়ম থাকলেও একই শেডে সবধরনের মালামাল রাখা হয় বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। আর সারা বছরই ঠিকাদারের গাফিলতিতে ক্রেন, ফর্কলিফট নষ্ট থাকে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বন্দরে ছাউনিযুক্ত গুদামের অভাব রয়েছে। গুদাম না থাকার কারণে পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে বিল অব এন্ট্রি দাখিল এবং শুল্কায়ন করা যায় না। বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি প্রকল্প নিয়ে ৬টি প্রি-ফেব্রিকেটেড গুদাম নির্মাণ করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্যের শুল্ক নেই বা কম শুল্ক, সেগুলো ট্রাক টু ট্র্যাক পরীক্ষণ, অ্যাসেসমেন্ট ও ডেলিভারি দিলে শিল্পের কাঁচামাল অনেক সুবিধা পাবে।’

বন্দরে আড়াই লাখ গ্যালনে ধারণক্ষমতা সম্পন্ন রিজার্ভার, ৫৫ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি পাম্প, একটি দ্বিতল ভবনসহ ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম রয়েছে। সিসি ক্যামেরা, সুউচ্চ প্রাচীর আর নিরাপত্তা বাহিনী-বেষ্টিত বন্দরের অভ্যন্তর থেকে পণ্য চুরির অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া যায়। বন্দরের মালামাল চুরির ঘটনায় বছর জুড়েই নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের বদলিসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিরাপত্তার নতুন সংযোজন আউটসোর্সিং কর্মীরাও জড়িয়ে পড়েছে একই অপরাধে। তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষ বন্দর ব্যবহার করলেও অভ্যন্তরে নেই কোনো ক্যান্টিন। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতাও বড় সমস্যা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শামসুর রহমান বলেন, ‘বন্দরে পর্যাপ্ত উন্নয়ন হয়েছে। তবে একই শেডে একই প্রকৃতির মাল না রাখাটা সমস্যার। আর ক্রেন, ফর্কলিফটের সমস্যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।’ বেনাপোল থেকে অনেক আমদানিকারক মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির সুযোগ এখানে নেই। এখানে সঠিক শুল্কায়ন হচ্ছে। যারা এটা চায় না, তারা এ বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারেন।’ তবে আমদানিকারকরা ব্যাংক থেকে এলসি পাচ্ছেন না বলে আমদানি কমে যাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘যত না সমস্যা, তার চেয়ে প্রপাগান্ডা বেশি। বন্দরের অভ্যন্তরে জ্যাম থাকে, এটাই বন্দরের বৈশিষ্ট্য। আর ক্রেন, ফর্কলিফটের আধুনিক সেবা পেতে গেলে সেবামূল্য বাড়াতে হবে। এজন্য আমরা আগামী ১৫ বছর চলার উপযোগিতা যাচাই করে টেন্ডারে যাচ্ছি।’ ৫২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হয়ে গেলে ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, কেমিক্যাল শেড, পৃথক পাওয়ার স্টেশন, ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন হবে। নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিকসহ সবার কার্ড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের হুমকিধমকি শুনতে হয়েছে অনেক। চুরির অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ভেতরে সিগারেট খাওয়ার প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। বন্দরের জন্য আগুন বিপজ্জনক বিবেচনায় ক্যান্টিন পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’ জলাবদ্ধতা সমস্যা সম্পর্কে পরিচালক বলেন, ‘বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বন্দরের পানিতে কাস্টমস পর্যন্ত ডুবে যায়। রেলওয়ের অপরিকল্পিত স্থাপনার জন্য এমনটা হয়েছে। এজন্য আমরা রেলওয়ে এবং বেনাপোল পৌর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।’

এদিকে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ ব্যবহার হচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিস হিসেবে। সকাল সাড়ে ৬টায় যাত্রী টার্মিনাল খোলা হয়। তবে ভোর ৪টা থেকে দূরপাল্লার নৈশকোচে যাত্রীরা এখানে পৌঁছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতামূলক টার্মিনাল ব্যবহার ফি দেওয়া লাগলেও রাতের অন্ধকারে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় তারা থাকেন খোলা আকাশের নিচে। এ সময় ছিনতাইকারী ও দালাল চক্রের লোকেরা নানা কৌশলে যাত্রীদের টাকা, ডলার, স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন। এমন এক ঘটনায় চিকিত্সার জন্য নেওয়া বড় অঙ্কের টাকা খোয়ানো এক জন রোগী সারাদিন থানাপুলিশ করেও প্রতিকার পাননি। বিকালে সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান। ছিনতাইকারী-দালালের ফাঁদে পড়া পাসপোর্টধারী বেশির ভাগ যাত্রী বিড়ম্বনা এড়াতে আইনি সহায়তা নেন না। আবার যেসব ঘটনায় বেনাপোল পোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের হয়, তার সুরাহার কোনো নজির নেই।

বন্দর অভ্যন্তর যেন অনিয়মের ডিপো :ভারত থেকে বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য পৌঁছানোর পর শুরু হয় সব পক্ষের সব রকমের লেনদেন। দিনের শুরুতে কার্গো শাখায় আমদানির এন্ট্রি পয়েন্টে কাজ শুরু হয় ধীরগতি দিয়ে। যে পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে, সেখানে কম্পিউটার এন্ট্রির জন্য নেই একজনও অপারেটর। দুজন সিপাহির একজন কোনোরকম পারলেও আরেক জন পারেন না। এসব নিয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন থেকে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান।

কার্গো শাখা থেকে বন্দরের পোস্টিং শাখায় মাল পৌঁছালেও দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শেড খোলার অপেক্ষায়। সকাল সাড়ে ১০টা-১১টার আগে শেড খোলাই হয় না। এখানে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য শেড ইনচার্জকে ট্রাকপ্রতি ১০০-২০০ টাকা দিতে হতো। সাম্প্রতিককালে এই রেট সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। টাকা না দিলে মাল নামানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।

বন্দরে সব ধরনের মালামাল রাখার ক্ষেত্রে তিন দিন পর্যন্ত ফ্রি টাইম ধরা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম টায়ারের ক্ষেত্রে। অন্যান্য বন্দরে ফ্রি টাইম থাকলেও এখানে নেই। ১৮-২০ টনের টায়ার এখানে রাখতে হলে এক দিনের জন্য আমদানিকারককে গুনতে হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। ফলে টায়ার আনার ক্ষেত্রে এই বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। একজন আমদানিকারক বলেন, ‘সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে তিনি টায়ার এনে ফ্রি টাইম সুবিধা পেয়েছেন। এখানে পাচ্ছেন না, তাহলে কেন আনবেন এই পথ দিয়ে?’

ঘুষের নাম স্পিডমানি : আমদানিকারকের প্রতিনিধি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে একসময় কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন করতেন বেসরকারি স্থানীয় বাসিন্দারা, যারা ‘এনজিও’ নামে পরিচিত ছিলেন। গত ৬ অক্টোবর দুদকের অভিযানে এমন দুজন ‘এনজিও’ এবং কাস্টমসের একজন নারী রাজস্ব কর্মকর্তা ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার হন। এর পরপরই বিদায় দেওয়া হয় ‘এনজিও’ নামধারী ঘুষের টাকা সংগ্রাহক ১৪০ জনকে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বরূপে ফিরে আসে। এআরও বা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এবং আরও বা রাজস্ব কর্মকর্তারা নিজেরাই হাতে হাতে নিতে শুরু করেন স্পিডমানি নামের ঘুষ। টাকা ছাড়া টেবিল থেকে একটা ফাইলও নড়ে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরাও নানা সুবিধা গ্রহণ করেন ‘স্পিডমানি’ নামের মাসোহারা দিয়ে। শুরুতেই ‘মেনিফেস্ট বিল অব এন্ট্রির’ জন্য কাস্টমস ক্লার্ককে দিতে হয় ফাইলপ্রতি ৫০ টাকা। ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভারদের কার্গো শাখায় মেনিফেস্টের কপি পৌঁছে দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সবসময় এটা হয় না। আর মেনিফেস্ট না পেলে বিল অব এন্ট্রির জন্য গুনতে হয় অতিরিক্ত ২০০ টাকা। পণ্য পরীক্ষণ শাখায় চলে লাগামহীন বাণিজ্য। এখানে কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার (এআরও) ফাইলপ্রতি সাধারণ মূল্য নির্ধারণ করা আছে ৫০০ টাকা। রাজস্ব কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের সাধারণ চার্জ ১ হাজার টাকা করে। সহকারী কমিশনারের টাকা অবশ্য সংগ্রহ করেন সিপাহিরা। এজন্য তারা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কাছ থেকে মাসোহারা নেন ২০০-৩০০ টাকা করে। পরীক্ষণ শাখা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে আমদানি পণ্যের ওজন বেশি কিংবা এইচএস কোড ঠিকঠাক দেওয়া আছে কি না। এসব জায়গায় আমদানিকারকেরও থাকে নানা বিচ্যুতি। এটার সুযোগ নিয়ে এআরও, আরও আর সহকারী কমিশনার মিলিয়ে নেমে যায় লাখখানেকের মতো টাকা।

পরীক্ষণ শাখা ঘুরে অ্যাসেসমেন্ট বা শুল্কায়ন শাখায় এলে এআরও-আরও-এর প্রত্যেককে দিতে হয় সর্বনিম্ন ৫ হাজার করে টাকা। মোটরপার্টস, কসমেটিকস, ফুড সাপ্লিমেন্টের মতো উচ্চশুল্কের কিছু পণ্যে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগে যায় ফাইল ছাড়াতে। অভিন্ন খরচের জোগান দিতে হয় সহকারী কমিশনারের টেবিলে। এই ডেস্কে ঝামেলাযুক্ত ফাইলের রেট ওঠে লাখ টাকায়ও। এরপরের ধাপে ডেপুটি কমিশনারের জন্য ৫ হাজার সাধারণ চার্জ থেকে আনলিমিটেড এবং জয়েন্ট কমিশনারের টেবিলে ১০ হাজার থেকে আনলিমিটেড স্পিডমানির প্রচলন রয়েছে। যদিও বর্তমানে পদ দুটো শূন্য রয়েছে। ১৫ হাজার থেকে শুরু করে অনলিমিটেড টাকা ব্যয় হয় অতিরিক্ত কমিশনার পর্যায়ে। তবে বর্তমানে এই ডেস্কে ফাইল টাকা ছাড়াই মুক্তি পাচ্ছে বলে আমদানিকারকরা জানান। আর চূড়ান্ত পর্যায়ে কমিশনার টেবিলে দিনের শত শত ফাইল স্বাভাবিকভাবে মুক্তি পেলেও আটকে যায় ১০-২০টি ফাইল। এগুলো ছাড়াতে হয় বিশেষ রফা। তবে বর্তমানে এই টেবিলও স্পিডমানিমুক্ত রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

এদিকে কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অধীনে বেনাপোলে দায়িত্ব পালন করেন একজন সহকারী পরিচালক। বন্দরের মেনিফেস্ট রেনডম ভিত্তিতে নেন তিনি। সিস্টেম লক করে কাস্টমস, বন্দর, আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন তিনি। ঝামেলা না থাকার পরও এমন লক হওয়া ফাইল ছাড় করাতে গুনতে হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা।

ব্যবসায়ীদের নানামুখী অভিযোগের ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্য করতে অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেসব পণ্য চালানে অনিয়ম নেই, সেগুলো দ্রুত ছাড় করার উদ্যোগ নিয়েছি। অটোমেশনের দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। গাড়ি ঢোকা, বের হওয়ার ক্ষেত্রে রিয়েল টাইম এন্ট্রি করা হচ্ছে। সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গণশুনানির ব্যবস্থাও আমরা করেছি। আর দুর্নীতি তো দুর্নীতিই। অফিস প্রধান দুর্নীতিমুক্ত থাকলে অন্যরাও ভালো হয়ে যান। এর বাইরেও অভ্যাসবশত কেউ যে সুযোগ খোঁজেন না, তা নয়। তবে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ আর শাখায় শাখায় স্পিডমানির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যে নামেই বলেন, যে কোনো অনৈতিক সুবিধা নেয়া অনুচিত।’

দুর্ভোগের নাম ‘কোড’ : কাস্টমস চায় পণ্য শক্ত কোডে ফেলে রাজস্ব বাড়াতে। আমদানিকারক চায় অপেক্ষাকৃত কম রাজস্বের কোডে ফেলে পার পাবার। দুই পক্ষের টানাপোড়নে অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট কমিটিও করা হয়। কিন্তু তারপরও ঝুলে যায় অনেক পণ্যের ভাগ্য। আর এই দুয়ের রশি টানাটানি নৈমত্তিক ঘটনা। এরকমই এক ঘটনায় আমদানি করা খেলার মার্বেলের জন্য আমদানিকারক ‘মার্বেল বল’ কোডে ফাইল দাখিল করেন। কিন্তু কাস্টমস এটাকে ‘গ্লাস মার্বেল’ কোডে দিলে কয়েকমাস ধরে ঝুলে রয়েছে এই মাল ছাড় করানোর প্রক্রিয়া। আবার ফুড সাপ্লিমেন্টের ৩৫-৩৬টি কনসাইনমেন্ট আটকে আছে বন্দরে মাসের পর মাস। ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে প্রত্যয়ন চেয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা প্রত্যয়ন দিতে অস্বীকার করায় পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়নি কাস্টমস। এ প্রসঙ্গে একজন ব্যবসায়ী বলেন, মার্বেল ও ফুড সাপ্লিমেন্ট অন্য বন্দর দিয়ে হরহামেশা আসছে। কিন্তু বেনাপোলে আটকে দেওয়ায় আমদানিকারকরা এসব পণ্য আনার জন্য এ বন্দর আর ব্যবহার করবেন না। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘এ মাসেই পেট্রাপোলে গিয়ে ফুড সাপ্লিমেন্টের অনেক কনসাইমেন্ট দেখে এসেছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে বেনাপোল দিয়ে দেশে আনতে উদ্যোগী হচ্ছেন না।’

বৈধপথে অবৈধ কারবার : বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে বৈধভাবে আসে বেশকিছু বন্ডেড পণ্য। আমদানিকৃত এসব পণ্য ডেনিম, ফেব্রিক্স, তুলার মতো নামমাত্র শুল্ক বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসে। গুরুতর অভিযোগ হলো, এসব বন্ডেড পণ্যের ট্রাকে আসে শাড়ি, থ্রিপিস ও কসমেটিকস সামগ্রী। কিন্তু ভারতীয় ট্রাক থেকে আনলোড হয়ে বাংলাদেশের ট্রাকে লোড হওয়ার আগেই চোরাই সামগ্রী অন্য ট্রাকে ওঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের বড় একটা অংশ একাজে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ। বেনাপোল হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. তবিবুর রহমান বলেন, ‘দেড় বছর হলো আমি ৯২৫-এর দায়িত্বে আছি। এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ৮৯১-এ এমন কয়েকটা ঘটনার কথা শুনেছি।’ তবে ৮৯১-এর সভাপতি মাকসুদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘শ্রমিকের কাজ লোডিং-আনলোডিং করা। কিন্তু অন্য সব কাজ প্রশাসনের। সেখানে কী হয়, আমরা বলতে পারব না।’

ভিসা জটিলতার প্রভাব : দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ভ্রমণ ও বাণিজ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। এতে বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক ভিসা প্রদান। ভারতে যাতায়াত করতে না পেরে বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কমে এসেছে আমদানি-রপ্তানি। আগে দিনে গড়ে ৭০০ ট্রাক পণ্যের বাণিজ্য হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪০০ ট্রাকের ঘরে। এতে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা গেছে। অন্যদিকে যাত্রী যাতায়াত কমে আসায় ভ্রমণ খাতেও কমেছে রাজস্ব আয়। এখনো বন্ধ রয়েছে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল চলাচল। বছরাধিককাল এ অবস্থা চলে আসলেও পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ঢাকাস্থ অ্যাডমিন অফিসার সঞ্জীব কুমার বালা মোবাইলে ইত্তেফাককে বলেন, ‘দুই দেশের সরকারেরই উচিত বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া। বাণিজ্য ভিসা সহজলভ্য করে দেওয়া হলে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।’

এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন আর্মড ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর ৪০ সদস্য। সম্প্রতি তাদের প্রত্যাহার করে সমসংখ্যক জেলা পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার সকাল থেকে জেলা পুলিশের সদস্যরা বন্দর এলাকায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। বন্দর পরিচালক মো. শামিম হোসেন জানান, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, পাসপোর্টধারী যাত্রী এবং বন্দরের স্থাপনাগুলোর সার্বিক নিরাপত্তায় ৪০ জন জেলা পুলিশ নিয়োজিত থাকবেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে এপিবিএনের সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অগ্নিঝুঁকিতে পণ্যাগার, নিরাপত্তা সুপারিশ উপেক্ষিত: বেনাপোল বন্দরটি সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ‘কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন’ বা কেপিআইভুক্ত। কিন্তু এই বন্দরের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ নয় বলে ফায়ার সার্ভিস দফায় দফায় সতর্ক করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে। বন্দর পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ির্ভস নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়েছে। বন্দরের অগ্নি নিরাপত্তা যথেষ্ট নয় বলে তারা মতামত দিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জেলার কেপিআইভুক্ত ১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টিকেই আগুনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে তা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সুপারিশমালা প্রদান করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে বেশকিছু দুর্বলতাকে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৬টি বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৯শ’ ৬০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এর বাইরে মাঝে মধ্যেই ছোটখাট অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনে বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য ১১টি সুপারিশমালা প্রদান করে তা তিনমাসের মধ্যে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয় একবছর আগে। কিন্ত এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

Related Articles

Back to top button