কুতুবদিয়া-মগনামা জেটির বেহাল অবস্থা

অনলাইন ডেস্ক: কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় যাতায়াতের একমাত্র পথ উপকূলীয় পেকুয়ার মগনামা জেটি ঘাট। দীর্ঘসময় মেরামতহীন থাকায় বর্তমানে জেটিটির চরম বেহাল দশা হয়ে আছে। জেটির অবকাঠামোগত জরাজীর্ণ সাগর পারাপারকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে এই ঘাট পার হচ্ছে।

জেটি ঘাটটির মূল স্তম্ভ (খুঁটি) থেকে কংক্রিট খসে পড়ে অধিকাংশের অবস্থা কঙ্কালসার। জেটির মেঝে ও সিঁড়ির অবস্থাও নাজুক। জেটিতে বেশ কয়েকটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। অসাবধানতায় যাতায়াতকারিরা মুহূর্তেই সাগরে পড়ে যেতে পারেন। দেখা যায়, জেটি ঘাটের প্ল্যাটফরম ও মূল পথের আটটি অংশে রেলিং ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। প্ল্যাটফরমের খুঁটিতে ভাঙনও স্পষ্ট। নৌযানে ওঠানামার চারটি সিঁড়ির মধ্যে তিনটিতেই ইট-সুরকি খসে পড়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।

সূত্রমতে, ১৯৯০ সালের দিকে কুতুবদিয়ায় যাত্রী পারাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মগনামা জেটি ঘাটটি স্থাপন করে। ২০০৪ সালে এটি সম্প্রসারণ করা হয়। প্রায় ২১ বছর ধরে এই জেটি ঘাট দিয়ে কুতুবদিয়ার প্রায় ৩ লাখ অধিবাসী এবং মালেকশাহ হুজুরের দরবারে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে আসছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর এ ঘাট ইজারা দিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে। গত ১৪৩১ বাংলা সনে শুধু মগনামা জেটি ঘাট থেকেই ৭০ লাখ টাকা এবং কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ও দরবার ঘাট মিলে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তবে, সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করলেও এই জেটি ঘাটটি বরাবরই উপেক্ষিত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঘাটের বেশিরভাগ বাতিই অকেজো। ফলে, সন্ধ্যা নামলেই ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় জেটি এলাকায়। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে এ ঘাট ব্যবহার করছে।

কুতুবদিয়া আলী আকবর ডেইলের বাসিন্দা জসিম উদ্দীন বলেন, ‘এ বেহাল দশা আমাদের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। প্ল্যাটফরমের খুঁটির অবস্থা এমন, যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রেলিং না থাকায় মানুষ অকস্মাৎ সাগরে পড়ে যেতে পারে এবং সিঁড়ির গর্তে আটকে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। নারী-শিশুদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ জেটি এলাকার বাসিন্দা রবিউল আলমসহ অনেকে অভিযোগ করেন, ‘ভাঙাচোরা জেটিতে এখনো টোল আদায়কারীরা মালভর্তি ট্রাক ও মিনি ট্রাক উঠাচ্ছে। এতে ঘাটের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, যা ধসের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

তবে টোল আদায়ে নিয়োজিত নূরুল ইসলাম জানান, জেটিঘাটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এর পরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনার্থে মিনি ট্রাক চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সদা সচেষ্ট রয়েছি।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘কিছু দিন আগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জেটিঘাটটি পরিদর্শন করেছেন। জরাজীর্ণ অবস্থায় বিপদ এড়াতে আপাতত ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক এম এ মান্নান বলেন, ‘সম্প্রতি কুতুবদিয়া উপজেলা পরিদর্শনে গিয়ে জেটিঘাটি দুরাবস্থা দেখেছি। পরবর্তী অর্থবছরে ঘাটটি মেরামত কিংবা নতুন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’

Related Articles

Back to top button