ইরানে দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব আইন লঙ্ঘন, দুই আয়োজক গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক: ইরানের কিশ দ্বীপে অনুষ্ঠিত একটি ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় হিজাব ছাড়া নারীদের অংশগ্রহণের ছবি প্রকাশের পর দুই আয়োজককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। মিজান অনলাইন জানায়, গ্রেপ্তার হওয়াদের একজন কিশ ফ্রি জোনের কর্মকর্তা এবং অন্যজন প্রতিযোগিতা আয়োজকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত দৌড় প্রতিযোগিতার ওই ছবিতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী ইসলামী প্রজাতন্ত্রের কঠোর পোশাকবিধি মানেননি। ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে প্রণীত আইনে নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। শনিবার বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এ ঘটনায় দুই প্রধান আয়োজককে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কিশ দ্বীপের এই দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নেন। এর আগে বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, আয়োজকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রসিকিউটরের বরাতে মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইনকানুন, ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি এবং পেশাগত নীতিমালা মানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগেই (আয়োজকদের) সতর্ক করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে, যা সামাজিক শালীনতা লঙ্ঘন করেছে।’
ইরানের বিচার বিভাগ সম্প্রতি অতিরক্ষণশীল মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে আছে। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক হিজাব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে এবং দেশের ওপর পশ্চিমা প্রভাব বাড়ছে।
২০২২ সালের দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর থেকে অনেক নারী প্রকাশ্যে হিজাব ছাড়া চলাচল করছেন। গত সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তর ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত এক হিজাববিহীন নারীর ছবি প্রকাশ করায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়।
রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ‘তাসনিম’ ও ‘ফার্স’ কিশ দ্বীপের এই প্রতিযোগিতাকে আগেই ‘অশালীন’ ও ইসলামি আইনসম্মত নয় বলে সমালোচনা করেছিল। এর আগেও ২০২৩ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজের এক ক্রীড়া আয়োজনে হিজাব ছাড়া নারী অংশগ্রহণকারীদের কারণে দেশটির অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রধানকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর ইরানে নারীদের পোশাকবিধিতে কঠোরতা আরোপ করা হয়। জনসমক্ষে নারীদের মাথার চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। ২০২২ সালে যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে তেহরানে গ্রেপ্তার হন কুর্দি তরুণী মাশা আমিনি। নীতি পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যু হলে দেশজুড়ে কয়েক মাস বিক্ষোভ চলে, যেখানে কয়েক শ মানুষ নিহত এবং বহু নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই হিজাব মানায় শৈথিল্য দেখা দেয়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইরানের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে হিজাব আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগ আনেন। পরে প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই কঠোরভাবে আইন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। পার্লামেন্ট হিজাব আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তির প্রস্তাব পাস করলেও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সরকার তা অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
এই প্রেক্ষাপটে কিশ দ্বীপে হিজাববিহীন নারীদের অংশগ্রহণ ও ছবি প্রকাশ আরও বিতর্ক উসকে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত দুই আয়োজককে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন নিয়ে চলমান উত্তেজনা আবারও সামনে চলে আসে।




