জোট গঠনের লক্ষ্যে ১৫টি দলের সঙ্গে মতবিনিময়

দেশ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তৃতীয় ধারার একটি রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করতে চাই: আনিস

অনলাইন ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে ১৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানে ‘হাওলাদার টাওয়ার’-এ অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ নামে নতুন জোট গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। জোটের মুখপাত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছেন জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। জোটের আত্মপ্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ ৬ ডিসেম্বর। আত্মপ্রকাশের আগে জোটের অন্তর্ভুক্ত সব দলের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে একটি ‘লিয়াজোঁ কমিটি’ গঠন করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জাপা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বিগত ৫৪ বছরে আমরা নির্বাচিত,
অনির্বাচিত ও সামরিক সরকার দেখেছি। সবাই কম-বেশি দেশটাকে বিভক্ত করেছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এজন্য দরকার একজন রাষ্ট্রনায়কোচিত ব্যক্তিত্ব। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে আমার কথা আমি বলব, তাদের কথা তারা বলবেন, সেখানে কেউ কারো কথার সঙ্গে একমত না-ও হতে পারেন। এজন্য দরকার একটি ভীতিমুক্ত পরিবেশ। একটি ভয়হীন দেশে বসবাসের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই ৫৪ বছরে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য-সেটা আমরা আজ পর্যন্ত অর্জন করতে পারিনি।

জেপি চেয়ারম্যান বলেন, বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু এর জন্য আইনশৃঙ্খলা কে ঠিক করবে? খুলনায় দেখলাম কোর্টের সামনেই গুলি করে দুই জনকে হত্যা করেছে। দলের মনোনয়ন না পেয়ে খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। কী ভয়াবহ! তিনি বলেন, একেকটা পরিবর্তন আসে আর পুলিশের পোশাকের রং বদল হয়। কিন্তু, চরিত্র বদলায় না। কারণ, যারা এই পুলিশকে পরিচালনা করেন তারা সবাই একই চরিত্রের মানুষ। নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়ার সফলতা কামনা করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

সভাপতির বক্তব্যে জাপা চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে এখন একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমরা সবাই মনে করছি, ফেব্রুয়ারিতে দেশ নির্বাচনের দিকে যাবে। কিন্তু, সবার মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। তার পরেও আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দেশের জনগণের কাছে একটি তৃতীয় ধারার সুস্থ রাজনৈতিক শক্তি উপহার দিতে চাই। দেশ আজ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, তাহলে আমাদের ভালো ফল করার সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, আমাদের জোটের মূলমন্ত্র হবে, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র ও সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থান।

ব্যারিস্টার আনিস আরো বলেন, এই জোটটি শুধু নির্বাচনি জোট হবে না। আমরা আগামীতে এই জোট নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি নির্মূল করব। বিকশিত করব সুস্থধারার রাজনীতি। তিনি বলেন, কেউ বলে বিএনপি, কেউ বলে জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। যে যাই বলুক, আমরা যদি সঠিকভাবে রাজনীতিটা করতে পারি তাহলে আমরাই হবো শক্তিশালী বিরোধী দল।

সূচনা বক্তব্যে জাপার মহাসচিব ও জোটের মুখপাত্র এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দেশে আগামী দিনে সুস্থধারার রাজনীতিকে বিকশিত করার লক্ষ্যে যেসব দল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, উদার গণতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী সেসব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি বৃহত্তর জোট গঠনের লক্ষ্যে আমরা এই মতবিনিময় সভা করছি। আশা করছি, চলতি সপ্তাহে এ জোট আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে। তিনি বলেন, যদি দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, তাহলে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে এখন পর্যন্ত দেশে নির্বাচন আয়োজনের মতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।

মতবিনিময় সভায় জনতা পার্টি বাংলাদেশের (জেপিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, আজকে যারা মঞ্চে রয়েছেন তাদের নেতৃত্বেই এরশাদ সাহেব এদেশে প্রথম সংস্কার শুরু করেন। আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই। একটি অর্থবহ নির্বাচন চাই।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম; জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা; জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, মহাসচিব সাংবাদিক শওকত, জেপিবির মহাসচিব শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (মতিন) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম ও মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন ছালু, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আশরাফুল হক, বাংলাদেশ ইসলামিক জোটের চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক, জাতীয় সংস্কার জোটের সভাপতি মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির চেয়ারম্যান মো. আখতার হোসেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু, বাংলাদেশ সার্বজনীন দলের সভাপতি নূর মোহাম্মদ মনির ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, পিচ অ্যালায়েন্সের চেয়ারম্যান হাজী এস এম এ জলিল ও ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।

Related Articles

Back to top button