কুমিল্লায় মা-মেয়ের খুনের রহস্যের জট খুলেছে

অনলাইন ডেস্ক: কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩) ও তার মা তাহমিনা বেগমের (৫২) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জিন তাড়ানোর জন্য ডেকে আনা কবিরাজের হাতেই খুন হন মা-মেয়ে। ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় ঝাড়ফুঁক করা কবিরাজ মোবারক (২৯) তাদেরকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য জানান।

গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর এলাকা থেকে ঘটনার একমাত্র অভিযুক্ত কবিরাজ মোবারক হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃত মোবারক হোসেন (২৯) নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি নগরীর বাবুস সালাম জামে মসজিদের খাদেম এবং পাশাপাশি কবিরাজি ব্যবসা করেন।

পুলিশ সুপার জানান, নিহত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিনের মা তাহমিনা বেগম নগরীর বাবুস সালাম জামে মসজিদের খতিব ইলিয়াস হুজুরের কাছে মাঝেমধ্যে ঝাঁড়ফুকের জন্য যেতেন। সেখানে পরিচয় হয় ওই মসজিদের খাদেম মোবারকের সাথে। মোবারক নিজেও কবিরজি করেন বলে তাহমিনা বেগমকে নিশ্চিত করেন। সেই সূত্র ধরে গত একমাস ধরে তাহমিনা বেগমদের বাসায় যাতায়াত ছিল মোবারকের।

গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) তাহমিনা বেগম তার মেয়ের জিন তাড়ানোর জন্য কবিরাজ মোবারককে বাসায় ডাকেন। জিন তাড়ানোর জন্য সুমাইয়ার কক্ষে যান তিনি। একপর্যায়ে কবিরাজ মোবারক সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তির সময় মা তাহমিনা বেগম টের পেয়ে তার মেয়েকে বাঁচাতে যান। এসময় ওই কবিরাজ মোবারক সুমাইয়াকে তার কক্ষে আটকে রেখে সুমাইয়ার মা তাহমিনাকে তার কক্ষে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে সুমাইয়া আফরিনের কক্ষে গিয়ে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ড শেষে তাদের বাসায় থাকা ৪টি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার পর পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুরোদমে কাজ শুরু করে। ঘটনাস্থলের পাশের একটি স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে মূলহোতা মোবারককো সনাক্ত করা হয়। ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া কবিরাজ মোবারক সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য রওনা হন। এসময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে নগরীর ধর্মপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে হত্যাকাণ্ড একজনেরই করা। তবে আমাদের তদন্ত চলছে। আর কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। গ্রেপ্তারকৃত মোবারককে আদালতে তোলার প্রক্রিয়া চলছে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে মা এবং মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৪৫) এবং তার মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন (২৩)। এ ঘটনায় নিহত তাহমিনার বড় ছেলে তাজুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Related Articles

Back to top button