ধর্ষণের উর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উদ্বেগ

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর অধিকার গোষ্ঠীগুলো এর জন্য আইন-শৃঙ্খলার অবনতিকে দায়ী করেছে। একই সঙ্গে পুলিশও সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘সংকটপূর্ণ’ আখ্যা দিয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম জানান, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসেই যত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, তা গত বছরের মোট সংখ্যার কাছাকাছি। তিনি বলেন, ‘যখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে, তখন নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়ে যায়।’ তার মতে, সমাজে নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক পরিবেশ তৈরির একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে।
সংগঠনটি জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৫৪টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যা ২০২২ সালের মোট ৩৬৪ ঘটনার প্রায় সমান। মহিলা পরিষদ আরও মনে করে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
পুলিশের তথ্যও এই প্রবণতার সত্যতা প্রমাণ করে। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ছিল ৯ হাজার, এ বছরের একই সময়ে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজারের বেশি।
যদিও পুলিশ আলাদাভাবে যৌন নিপীড়ন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তারা সার্বিক নিরাপত্তার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পুলিশের মুখপাত্র এ এইচ এম সাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘এটি একটি সংকটজনক পরিস্থিতি। পুলিশ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।’
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) একই ধরনের চিত্র তুলে ধরেছে। আসকের সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফাইজুল কবির বলেন, ‘পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে পরিবর্তনের পর আমরা নতুন শাসনব্যবস্থা থেকে আশাবাদী ছিলাম, বাস্তবে তা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।’
ফওজিয়া মোসলেম আরও বলেন, নারীরা ক্রমবর্ধমান চাপ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নাম না উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রদায়িকতা ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য উসকে দেওয়া হচ্ছে, যা সহিংসতার ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে, বিশেষ করে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীগুলোর উত্থান নিয়ে নারী অধিকার কর্মীদের উদ্বেগ বাড়ছে। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।সূত্র ও ছবি: দৈনিক ইত্তেফাক