যুক্তরাজ্যে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে বাংলাদেশির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

অনলাইন ডেস্ক: পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনের কারণে আলাদা থাকা স্ত্রীকে নিজের শিশুসন্তানের সামনেই নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে হাবিবুর রহমান মাসুম (২৬) নামের এক বাংলাদেশিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্ট এই সাজা ঘোষণা করেন। রায়ের আদেশে আদালত বলেন, হাবিবুর অন্তত ২৮ বছর কারাভোগ না করে মুক্তি পাবেন না।
গত বছরের ৬ এপ্রিল কুলসুমা আক্তার (২৭) তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে ব্র্যাডফোর্ডের একটি নারী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হলে হাবিবুর তাঁর পিছু নেন এবং রাস্তায় প্রকাশ্যে ছুরি নিয়ে আক্রমণ করেন।
সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজে দেখা যায়, কুলসুমা শিশুসন্তানকে বহনকারী ঠেলাগাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় কুলসুমাকে ছুরি দিয়ে ২৫ বারের বেশি আঘাত করেন হাবিবুর। কুলসুমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তদন্তে জানা গেছে, হাবিবুর আগে থেকেই পরিকল্পনা করে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে কুলসুমাকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের করে আনেন। তিনি নিজেকে একজন জিপি (চিকিৎসক) পরিচয় দিয়ে ওই বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
ঘটনার পর হাবিবুর নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পুলিশ পরে তাঁকে আইলসবুরি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৭ জুন হত্যা, হামলা, হত্যার হুমকি ও অনুসরণের অভিযোগে হাবিবুরকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।
আদালত বলেন, এই হামলা ছিল ‘ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত, নিষ্ঠুর ও চরম সহিংসতাপূর্ণ’। বিচারক আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি এবং পুরো বিচারপ্রক্রিয়ায় ছিলেন নির্বিকার।
কুলসুমার ভাই আকতার হুসেইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আমাদের বোন হত্যার বিচার পেয়েছি। যদিও আমরা আমাদের বোনকে ফেরত পাব না, কিন্তু হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি হওয়ায় আমরা খুশি।’
ঘটনাটি দেশজুড়ে নারীর নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস বলেছে, এই মামলাটি প্রমাণ করে, অনেক সময় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো নিরাপদ জায়গাও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত নয়।
হাবিবুর রহমান ব্রাডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর কোর্সের ছাত্র ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। পরে তাঁদের এক সন্তানের জন্ম হয়। বাংলাদেশে তাঁদের বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলায়।