শপথ ছাড়াই নগর ভবনে ইশরাকের বৈঠক, দিচ্ছেন নানা ‘নির্দেশনা’

অনলাইন ডেস্ক: বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৭০ জন ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে নগর ভবনে বৈঠক করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে শপথ না নিয়েই নিজেকে মেয়র দাবি করা এই নেতা ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের নিচতলায় একটি মিলনায়তনে সভা করেন। এই সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১০ প্রশাসনিক অঞ্চলের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

নগর ভবন মিলনায়তনে গতকালের সভার ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ওয়ার্ড সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। মাননীয় মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’

সভা সূত্র জানায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপিপন্থী সাবেক কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের ‘নির্দেশনা’ দিয়েছেন ইশরাক।

এ ছাড়া কাউন্সিলরদের কার্যালয় থেকে নাগরিকেরা যেসব সেবা পেতেন, সেসব সেবা এই কমিটির মাধ্যমে দিতে বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডের সচিবদের নিয়মিত অফিস করার পাশাপাশি নাগরিক সেবা তথা জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদসহ অন্যান্য সেবা দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, শপথ না নিয়ে আইনকানুন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইশরাক হোসেন যেভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, এটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গায়ের জোরে এভাবে নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে নগর ভবনে অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যেই গত সোমবার থেকে তিনি ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ শুরু করেছেন। সেদিন নগর ভবন মিলনায়তনে প্রায় ৭০ জন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে নানা মহলে তীব্র সমালোচনা হলেও গতকাল ওয়ার্ড সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি।

এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজারদের সঙ্গেও আজও বৈঠক করবেন তিনি এমনটি বলছে নগর ভবন সূত্র। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

গতকাল নগর ভবন মিলনায়তনে ওয়ার্ড সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ইশরাক।

এ সময় তিনি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তার শপথ নিয়ে ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক’ তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। পাশাপাশি এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।

ইশরাক বলেন, ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপন করায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার জন্য আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।’

বিএনপি নেতা ইশরাক অভিযোগ করেন, বিজয়ী প্রার্থীর নামে গেজেট প্রকাশিত হলে পরাজিত প্রার্থী অথবা যেকোনো একজন নাগরিককে সজীব ভুঁইয়ার মতো ব্যক্তি ইন্ধন দিয়ে শপথ না পড়ানোর জন্য হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করাবেন। ওই রিট মামলাটি অনিষ্পন্ন থাকলে গেজেটে উল্লিখিত ৩০ দিন মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ইশরাক হোসেন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ থেকে শেখ ফজলে নূর তাপসকে অপসারণ করে সরকার। চলতি বছরের ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে গত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এরপর ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল গত ২৯ মে পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। আদেশের পর ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন যে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ পর্যালোচনা করে ৪ জুন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তার কাজ সম্পন্ন করেছে।

ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকেরা ১৪ মে থেকে নগর ভবনে অবস্থান নিয়ে টানা কর্মসূচি পালন করছেন। ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেই নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকে নগর ভবনে সব ধরনের দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। শুধু মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের কাজ চলছে। কর্মকর্তারা অফিস করতে পারছেন না।

Related Articles

Back to top button