আত্মমর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান সমর্থন করে চীন

অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের জনগণের পছন্দকে সম্মান করে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল মঙ্গলবার বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন। ওয়াং ই বলেন, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে চীন। আমরা আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে গত সোমবার চার দিনের সফরে চীন যান উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বিজ্ঞপ্তিতে উপদেষ্টার বরাতে বলা হয়েছে, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণের সমর্থন রয়েছে। চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, অবকাঠামো, চিকিৎসা, পানি সংরক্ষণ, মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা আরও গভীর করতে চায় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের সমর্থনকে ধন্যবাদ জানায়। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এক চীন নীতি মেনে চলে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগে সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারকে সই করেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে ছিল চীন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটালেও চীন স্বাভাবিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন।

সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ এরই ধারাবাহিকতা বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াং ই বলেন, আমার দেশ প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কূটনীতিকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সুপ্রতিবেশী ও বন্ধুত্বের নীতি অনুসরণ করে। সহযোগিতা গভীর করার মাধ্যমে বেইজিং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী।

ওয়াং ই বলেন, চীন আধুনিকীকরণকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। বড় বড় এবং ছোট কিন্তু সুন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা সমন্বয় করার আহ্বান জানান তিনি। তৌহিদ হোসেনকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন উদীয়মান ক্ষেত্র খুঁজে বের করুন এবং দু’দেশের ঐতিহাসিক সহযোগিতা একীভূত করুন।

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ পলিটব্যুরোর এ সদস্য বলেন, চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী এবং অংশীদার। একে অপরকে সাহায্য করে এবং উন্নয়ন চায়। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৫০ বছরে উভয় পক্ষ একে অপরকে সম্মান করেছে। পারস্পরিক লাভের এ সম্পর্ক অন্যদের জন্য উদাহরণ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাংলাদেশের সব দল চায়, যা সরকার ও পুরো জাতি সমর্থন করে। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জড়িত হতে আগ্রহী। পাশাপাশি আঞ্চলিক বিষয়ে সমন্বয় জোরদার করতে, সংযোগ ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণের অংশীদার হিসেবে কাজ করতে এবং যৌথভাবে আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার রক্ষা করতে আগ্রহী।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠক প্রসঙ্গে টেনে বলেছেন, চীনের দেওয়া ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে ৩০ করতে ঢাকার অনুরোধে সাড়া দিয়েছে বেইজিং; প্রেফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং গভর্নমেন্ট কনসেশন লোন (জিসিএল) উভয় ক্ষেত্রে ঋণের সুদহার ২-৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা ও প্রতিশ্রুতি ফি বাদ দেওয়ার বিষয় বিবেচনার অুনরোধে ‘নীতিগতভাবে ঐকমত্য’ পোষণ করেছেন ওয়াং ই।

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পিবিসি ও জিসিএল চুক্তির আওতায় চীন থেকে ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। উভয় চুক্তিতে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। জিসিএলে ঋণে সুদহার ২ শতাংশ হলেও পিবিসিতে এ হার ৩ শতাংশ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী চীনের কাছে বাংলাদেশের ঋণের দায় ছিল ৫৫৭ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট ঋণের ৯ শতাংশ। ঋণদাতা হিসেবে চীন ছিল চতুর্থ অবস্থানে।

ঋণ পরিশোধের সময় বাড়াতে ইতিবাচক সাড়ার পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও তিন বছর বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের আশ্বাস দিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিষয় : চীন

Related Articles

Back to top button