হাদিকে গুলি করা দুর্বৃত্ত গোয়েন্দাদের জালে!

  • সন্দেহের তির নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার দিকে 
  • ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা 
  • সম্ভাব্য হামলাকারীর ছবি প্রকাশ 
  • সীমান্তে বিজিবির কড়া সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক: দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির বাম কানের নিচে ঢুকে ডান কানের ওপরে ক্রস হয়ে বেরিয়ে গেছে। একটি গুলিই ছুড়েছে দুর্বৃত্ত। ডিবি কর্মকর্তাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই তাকে গুলি করার পরিকল্পনা করেছিল। সেই অনুযায়ী সময় ও স্থান বেছে নেওয়া হয়। শুক্রবার ছুটির দিন যানজট থাকে না। সড়ক ফাঁকা থাকে। এই সুযোগ তারা বেছে নিয়েছে। শুটার গ্রুপ তার পিছু নিয়ে অপারেশন সাকসেস করে পালিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত গোয়েন্দারা শুটারদের কোনো অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, গুলিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্তত এক জনসহ সন্দেহভাজন পাঁচ জন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে।

সূত্র জানায়, গুলির ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ, ডিবি ও র্যাব। কেন, কারা এবং কী উদ্দেশ্যে তার ওপর গুলি করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি হাদির গুলির ঘটনার বিষয়টি উদ্ঘাটনের স্বার্থে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় শনিবার রাত পর্যন্ত পল্টন থানায় মামলা হয়নি। তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাদিকে গুলির পর কেউ যাতে প্রতিরোধ করতে না পারে তার রিকশার আগে ও পিছে দুর্বৃত্তদের কোনো গাড়ি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এছাড়াও সিসি ক্যামেরায় আশপাশের লোকজনের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, ঘটনাস্থলের ফুটেজ এবং প্রাপ্ত অন্যান্য তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

ফুটেজে মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গুলি করতে দেখা যাওয়া ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের চেহারা মিল রয়েছে। পুলিশ তাকেই এই হামলার মূল সন্দেহভাজন বলে মনে করছে। এর আগেও ফয়সাল করিমের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর এলাকায় একটি অফিসে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুট ও ডাকাতির ঘটনায় তিনি র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ঐ সময় একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে তার ছবিসহ খবর প্রকাশিত হয় এবং তিনি মামলার প্রধান আসামি ছিলেন। পরে তিনি জামিনে কারাগার থেকে ছাড়া পান।

শুটার ফয়সালসহ মোটরসাইকেলে আরো এক জনকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ডিবি জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে এবং পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ জনগণের প্রতি বিনীত অনুরোধ করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম গতকাল শনিবার বিকালে ইত্তেফাককে জানান, ‘হাদিকে কারা গুলি করেছে তাদের চিহ্নিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। এখনো পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।’ র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, ‘আমরা ছায়া তদন্ত করছি। আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে।’

৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির হত্যাচেষ্টায় জড়িতকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল শনিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এমন তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার।’

প্রার্থীদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: হাদির ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আমরা প্রাইম টার্গেটকে খুঁজছি। এখনো ২৪ ঘণ্টা পার হয়নি। হোপফুলি এটা আমরা ডিটেক্ট করতে পারব।’ কতজন এই চক্রের সঙ্গে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না, আমরা টার্গেটকে খুঁজছি।’ আসামির নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা তাকে খুঁজছি। জনগণের সহযোগিতা চেয়েছি।’

সম্ভাব্য হামলাকারীর ছবি প্রকাশ: ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন এক জনের ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। গতকাল শনিবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। সন্ধানদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়া হবে। পুলিশের মতিঝিল ডিসির ০১৩২০০৪০০৮০ এবং ওসি পল্টনের ০১৩২০০৪০১৩২ এই নম্বরে তথ্য জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

পুলিশের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সন্দেহভাজন ঐ যুবকের নাম ফয়সাল করিম মাসুদ, ডাকনাম রাহুল। তার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। ফয়সাল করিম মাসুদের স্থায়ী ঠিকানা বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে, কেশবপুর কলেজসংলগ্ন এলাকায়। তার পিতার নাম হুমায়ুন কবির। বর্তমানে তিনি ঢাকার আদাবর থানাধীন পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির ৪১ নম্বর বাসা, ৯ নম্বর রোডে বসবাস করতেন। জানা গেছে, তিনি আদাবর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি। আদাবর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।

সন্দেহভাজন যুবকের বাড়ি পটুয়াখালী: ফয়সাল করিম মাসুদের বাড়ির ঠিকানা বাউফল এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর সেখানে মানুষের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। বাউফল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। তার বাবার নাম মো. হুমায়ুন কবির ওরফে আবদুল মালেক মুন্সি। গতকাল শনিবার সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দা ও বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফয়সাল করিম মাসুদের জন্ম ঢাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, ফয়সাল করিম কোনোদিন গ্রামের বাড়িতে আসেননি। ফয়সালের বাবা তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বিক্রি করে প্রায় ৩৫ বছর আগে ঢাকায় চলে যান। তার বাবা ও মা মারা যাওয়ার পরেও এলাকায় আসেননি।

সীমান্তে কড়া নজরদারি: ওসমান হাদিকে গুলি করার পর সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এই ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামিরা যেন বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যেই বেনাপোল সীমান্তে ব্যাপক নজরদারি ও তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সূত্র বলছে, বেনাপোল আইসিপি, আমড়াখালি, সাদীপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা, শিকারপুর, শালকোনা, কাশিপুর, মাসিলা, আন্দুলিয়া ও পাঁচপীরতলা এলাকাসহ সীমান্তসংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়।

Related Articles

Back to top button