ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠক

শুল্কের ন্যায্যতা চায় বাংলাদেশ
অনলাইন ডেস্ক: ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। বাংলাদেশ মনে করছে দুদেশের বাণিজ্য ঘাটতির তুলনায় এই শুল্কের হার অনেক বেশি। এটি বাংলাদেশের রপ্তানিতে বড় ধরনের আঘাত নিয়ে আসবে। তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে এই ন্যায্যতার ওপর জোর দিয়েছেন বাণিজ্য উপদষ্টো শেখ বশিরউদ্দীন।
বৈঠকে বেশ কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। সেখানে বাণিজ্য উপদষ্টো বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক এবং রপ্তানি পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
কিছু বিষয়ে ঐকমত্য বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ওই বৈঠক শুরু হয়। সেখানে দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে, সেসব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তিতর্ক হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টায় ওয়াশিংটনে তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রধান উপদষ্টোর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার ভোর ৫টায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য উপদষ্টো শেখ বশিরউদ্দীন যুগান্তরকে জানান, নির্ধারিত বৈঠক শেষ হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করতে বৈঠক করছি এখন। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউএসটিআরের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠকের বিষয়গুলো প্রেস সেক্রেটারি জানাবেন এমন সদ্ধিান্ত হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে ঢাকায় প্রেস সেক্রেটারির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।
এদিকে প্রধান উপদষ্টোর প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টায় তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হবে। দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো—বাণিজ্য উপদষ্টো শেখ বশীরউদ্দিন একান্তে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাম্বাসাডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে শুল্কবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থসংশি্লষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদষ্টো বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক থাকে। গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদষ্টো শেখ বশীরউদ্দিন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদষ্টো খলিলুর রহমান। সরাসরি আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চেৌধুরী। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত গত সোমবার থেকে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের চিঠি দিয়ে নতুন হারে শুল্ক আরোপের কথা জানাতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশ, সার্বিয়া, থাইল্যান্ড ও তিউনিসিয়ার মতো রপ্তানিকারক দেশসহ মোট ২১টি দেশকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদষ্টো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ৭ জুলাই লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে, আমাদের সম্পর্ক সমকক্ষ হওয়া থেকে অনেক দূরে। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যে কোনো পণ্যের ওপর আমরা মাত্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব।’
এদিকে বাংলাদেশ আশা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। সরকারের যুক্তি ছিল, ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো ২০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পেলে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক আরও কম হওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে।
জানা গেছে, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গতবছর মোট রপ্তানি পোশাকের ১৮ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতবছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক কমানোর শর্ত হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে, সেসব পণ্যে পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস চেয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে সরকারি খাতে ফুড ড্রিংক, বোয়িং বিমান ও মিলিটারি ইকুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়ার সদ্ধিান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত গম, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট ও অন্যান্য মেশিনারির ওপর ডিউটি খুব কম। তুলা আমদানিকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তুলার আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি আছে। সেটি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সেজন্য কিছু সুবিধা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।