রাজশাহী মহানগরীতে ফের বেপরোয়া কিশোর গ্যাং!

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী মহানগরীতে উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের হাত ধরে গজিয়ে ওঠা কিশোর গ্যাং সদস্যরা আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের লাগামহীন অপরাধে নগরজীবনের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী হামলা, মাদক সেবন ও বিক্রি ছাড়াও চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। বিশেষ করে বাইকে চেপে নানা পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, নারী কর্মজীবীদের উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মহানগরবাসীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উচ্ছৃঙ্খল কিশোর গ্যাং সদস্যদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে কয়েক বছর আগে মহানগরীতে ছয় শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যের ডাটাবেজ তৈরি করেছিল রাজশাহী মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিন্তু পুলিশের নজরদারির অভাব ও রাজনৈতিক নেতাদের দাপট এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং দমনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা দ্বিগুণ উত্সাহে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থানা-ফাঁড়িতে সহিংসতার পর আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। ফলে মহানগরীতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জনমনে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সন্ধ্যা হলেই কিশোরেরা দল বেঁধে মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে রেসে লিপ্ত হচ্ছে। সড়কে জনসমাগম থাকায় পথচারীরা হয়রানি হচ্ছে। সুযোগ বুঝে দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে ছিনতাই করছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর রাত ১০টায় মহানগরীর পঞ্চবটি এলাকায় মিম (২০) নামের এক যুবকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর এয়ারপোর্ট থানার ভুগরইলে অটোচালক সিরাজুল ইসলাম, ২২ সেপ্টেম্বর দামকুড়া থানায় অটোচালক সাজামুল ইসলাম, ১৭ অক্টোবর কাঁটখালীতে রিকশাচালক আলম নামের তিন ব্যক্তির হত্যার শিকার হন। গত বছর ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় কচুয়াতৈল এলাকায় পল্লী চিকিত্সক এরশাদ হত্যা এবং একই রাতে বর্ণালী এলাকায় ডা. কাজেম আলীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

নগরীর বালিয়াপুকুর এলাকার গৃহবধূ লায়লা বানু বলেন, ‘২৮ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি বনলতা ট্রেন ধরার জন্য রিকশায় রেলওয়ে স্টেশন যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শিরোইল মসজিদের কাছে চার-পাঁচ কিশোর দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে তার গলার স্বর্ণের চেইন ও নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ নিয়ে পরে সমস্যা হতে পারে, এমন ভেবে থানায় অভিযোগ করেননি বলে জানান। কয়েক দিন আগে অন্তরা রায়দা নামের এক গৃহবধূ তার ফেসবুক পোস্টে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে লিখেছেন, ‘আমার জীবনে এর চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা সম্ভবত ঘটেনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহানগরীর বন্ধ গেট পার হয়ে সিটি বাইপাসের আগে আমার ব্যাগটা পাশে থেকে একটি বাইকযোগে তিনজন এসে টান দেয়। আমি ব্যাগটা খুব শক্ত করে ধরেছিলাম। আর ব্যাগের হ্যান্ডেলটা শক্ত না হওয়ায় হ্যান্ডেলটা ছিড়ে যায়। যদি ব্যাগের হ্যান্ডেলটা শক্ত হতো তাহলে ব্যাগের সঙ্গে আমিও পড়ে যেতাম।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘কয়েকদিন আগে নর্দার্ন মোড় থেকে আমার এক বান্ধবীর ব্যাগও ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।’

এদিকে কয়েক দিন আগে মহানগরীর মতিহার থানা এলাকা থেকে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে নগরীর মতিহার থানা পুলিশ। আসামিদের বয়স ২৪-২৬ বছরের মধ্যে। পুলিশের ধারণা, এরা কিশোর গ্যাং সদস্য। এছাড়া দামকুড়া থানায় সম্প্রতি ছিনতাইয়ের পর অটোরিকশা চালককে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যর উচ্ছৃঙ্খল তৎপরতা বন্ধসহ আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, ছিনতাইকারীদের দমন, কিশোর অপরাধীদের গতিবিধি নজরদারি এবং মাদক নির্মূলে সব থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) কড়া নির্দেশ দিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার।

তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি খুনের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া চুরি, ছিনতাই রোধে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। অপরাধ নির্মূলে তিনি রাজশাহী মহানগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

মহানগরীর সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বোয়ালিয়া, মতিহার ও চন্দ্রিমা থানা এলাকা। অপরাধের ঘটনাগুলো এই তিন থানায় বেশি। মতামতের জন্য ফোন করলে বায়ালিয়া থানার ওসি রিসিভ করেননি।

তবে থানার ওসি তদন্ত তাজমুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন হলো এ থানায় যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা পাইনি। আর কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে কাজ চলছে।’

মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা একেবারে নাই, এমন নয়। পৃথক ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা ছয় জনকে আটক করেছি। অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়েছে। দিনে ও রাতে আমাদের সাতটি টহল টিম কাজ করছে। নগরীল চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিউর রহমান বলেন, গত মাসের ১৮ তারিখে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। দিনে-রাতে চারটি টহল টিম কাজ করছে। কিশোর গ্যাং নিয়ে কাজ শুরু করেছি।সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Related Articles

Back to top button