বাউল শিল্পীর সমর্থকদের ওপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে: এনসিপি

অনলাইন ডেস্ক: মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এ ঘটনার নিরপেক্ষ, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করে হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে দলটি।
গতকাল রোববার (২৩ নভেম্বর) এনসিপির ধর্ম ও সম্প্রীতি সেল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা জানায়।
এনসিপির ধর্ম ও সম্প্রীতি সেলের সম্পাদক তারেক রেজা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পী আবুল সরকারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তার সমর্থকদের ওপর সংঘটিত হামলা, ধাওয়া ও ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ধর্ম ও সম্প্রীতি সেল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে এবং দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাচ্ছে। যে মতবিরোধ বা অভিযোগই থাকুক—সহিংসতা, হয়রানি বা আইনহীনতার কোনো বৈধতা নেই।’
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যে বাউল, ফকির, সুফি, তাসাওফপন্থীসহ বিভিন্ন ধারার সমৃদ্ধ অবদান রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই বৈচিত্র্য রক্ষা করা মানে আমাদের মানবিক রাষ্ট্রচিন্তা ও ঐতিহাসিক সম্প্রীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। বাংলাদেশটা সবার—এখানে ভিন্নমতকে দমন নয়, বরং শোনা ও বোঝার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ধর্মীয় মত বা ব্যাখ্যা নিয়ে ভিন্নতা থাকতেই পারে, এবং কখনো কখনো তা বিতর্কের সৃষ্টি করতেও পারে। কিন্তু তার উত্তরের পথ কখনোই সহিংসতা বা প্রতিশোধ হতে পারে না—জানিয়ে এনসিপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ দেশের দায়িত্বশীল আলেমসমাজ যুগের পর যুগ যে শান্তিপূর্ণ দাওয়াত, ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও সদাচরণের মাধ্যমে দ্বীনের শিক্ষা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসছেন—এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য। সমাজে উত্তেজনা বা ভুল ব্যাখ্যা দেখা দিলে এই শান্তিপ্রিয় আলেমসমাজই মানুষকে সংযম, শান্তি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধার পথে রাখার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
ধর্ম ও সমাজের প্রশ্নে সহিংসতার কোনো স্থান নেই—এই নীতিতে যারা অবিচল থেকেছেন, আমরা তাদের এই অবস্থানের সঙ্গে একাত্ম। শান্তিপূর্ণ দাওয়াত ও জ্ঞানভিত্তিক সংলাপই দ্বীনের প্রকৃত রাহবারি—এ কথাটি আজ আরও বেশি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন।
এনসিপি জানায়, মানিকগঞ্জের ঘটনাবলির নিরপেক্ষ, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নিশ্চিত করে হামলাকারী ও উসকানিদাতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
অভিযোগ বা মতভিন্নতার সমাধান হবে আইন, ন্যায়বিচার ও শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে, কোনোভাবেই জনতা বা গোষ্ঠীর হাতে নয়।
বাউল–ফকির–তাসাওফপন্থীসহ সকল সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
উসকানি, বিভাজন ও সহিংসতার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করে—ধর্মীয় নেতা, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সম্প্রীতি, সংযম ও পারস্পরিক সম্মানের পথ আরও শক্তিশালী করতে হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার বাউলশিল্পী আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এই হামলায় তিন ভক্ত-অনুরাগীসহ মোট চারজন আহত হন। আহত ভক্তরা হলেন জেলার শিবালয়ের শাকরাইল গ্রামের আবদুল আলীম (২৫), সিঙ্গাইরের তালেবপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম (২৯) ও হরিরামপুরের কামারঘোনা গ্রামের জহিরুল ইসলাম (৩২)। আহত অন্যজন হলেন সদর উপজেলার বরঙ্গাখোলা গ্রামের আবদুল আলীম (২৭)।
‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতা’ ব্যানারে থাকা একদল ব্যক্তি এবং আবুল সরকারের ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে এই ঘটনা ঘটে।




