আমদানি-রপ্তানি লেনদেনে আন্তর্জাতিক নিয়ম মানার নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বিক্রয়চুক্তিভিত্তিক লেনদেনে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে ডকুমেন্টারি কালেকশন পদ্ধতিতে এখন থেকে ইউনিফরম রুলস ফর কালেকশন (ইউআরসি) মানা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, অগ্রিম পরিশোধ, ডকুমেন্টারি কালেকশন এবং ওপেন অ্যাকাউন্ট-এই তিন অনুমোদিত পদ্ধতিতে বৈদেশিক বাণিজ্য করা যাবে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যমান আমদানি ও রপ্তানি নীতিমালা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার বিধান কঠোরভাবে মানতে হবে।
এখন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলো আমদানি-রপ্তানির এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) ভিত্তিক লেনদেনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইউনিফরম কাস্টমস অ্যান্ড প্র্যাকটিস (ইউসিপি) অনুসরণ করত। তবে এলসি ছাড়াও এখন বিকল্প পদ্ধতিতে, বিশেষত বিক্রয়চুক্তির ভিত্তিতে বাণিজ্যিক লেনদেন বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চায়, এসব লেনদেনও যেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রীতিনীতি অনুসরণ করে হয়।
বিশেষ করে ডকুমেন্টারি কালেকশন পদ্ধতি, যেখানে রপ্তানিকারকের ব্যাংক আমদানিকারকের ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কিত কাগজপত্র পাঠায় এবং নির্ধারিত শর্তে অর্থ পরিশোধ বা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে সেসব কাগজ হস্তান্তর করে, সেখানে ব্যাংক কেবল কাগজের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে, আর্থিক নিশ্চয়তা দেয় না। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ইউআরসির আওতায় পড়ে।
ব্যাংক ও বাণিজ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই স্পষ্ট নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর জন্য ইতিবাচক। এতদিন এলসিভিত্তিক লেনদেনে ইউসিপি অনুসরণ করলেও বিকল্প পদ্ধতির নিয়ম স্পষ্ট ছিল না। এখন চুক্তিভিত্তিক লেনদেনে ইউআরসি বাধ্যতামূলক করার ফলে লেনদেনের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে, ঝুঁকি কমবে এবং পেমেন্ট নিশ্চিতকরণে একটি নির্ভরযোগ্য কাঠামো দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ বৈদেশিক বাণিজ্যে পেমেন্ট ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, জবাবদিহিতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিকল্প পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে। শুধু এলসির ওপর নির্ভর না করে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বিক্রয়চুক্তিভিত্তিক ডকুমেন্টারি কালেকশন বা ওপেন অ্যাকাউন্টের মতো পদ্ধতিতে লেনদেন করছে। কিন্তু এসব পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক নিয়ম না মানলে লেনদেন জটিল হয়ে যেতে পারে বা ঝুঁকি তৈরি হয়। এই ঝুঁকি কমাতেই সার্কুলারের মাধ্যমে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে, যে পদ্ধতিতেই লেনদেন হোক, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম মেনে চলতেই হবে।
ব্যাংকগুলো এত দিন এলসির ক্ষেত্রে ইউসিপি মানত, কিন্তু অন্য পদ্ধতিগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। এবার তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে, ডকুমেন্টারি কালেকশন হলে ইউআরসি অনুসরণ করতে হবে। এতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও জবাবদিহিতা বাড়বে। সার্কুলারের মূল উদ্দেশ্য হলো- বৈদেশিক বাণিজ্যে ঝুঁকি হ্রাস, লেনদেন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশি ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত করা।