ঢাকা-চট্টগ্রাম ডিজেল পাইপলাইনে তেল পরিবহন এ মাস থেকেই

অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা-চট্টগ্রাম জ্বালানি তেল ডিজেল পাইপলাইনের বাণিজ্যিক পরিচালন চলতি জুলাই মাসে শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক তেল পরিবহনের কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এ পাইপলাইন দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ডিজেল পরিবহন শুরু হবে। দেশে প্রথম বারের মতো জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহের মাধ্যমে বছরে ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করছে সরকার।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সেনোবাহিনী প্রকল্পটি বিপিসিকে হস্তান্তর করার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরই বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু হবে। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ৬ হাজার টন ডিজেল পরিবহন করা হয়েছে। গত ২৪ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে ডিজেল পাঠানো হয়েছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, পাইপলাইনটি বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল পরিবহনের ক্ষেত্রে যে ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তা অনেকাংশে কমে যাবে। যেমন রেলওয়ের ওয়াগন থাকলেও লোকোমোটিভ পাওয়া যায় না। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে যানজটসহ নানা সমস্যা হয়, দীর্ঘ সময় লাগে। জলপথেও সমস্যা হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ব্যবহূত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল ৭০ শতাংশ। পাইপে এ জ্বালানিই সরবরাহ করা হবে। পেট্রোল ও অকটেন আগে যেভাবে সরবরাহ করা হতো (রেলওয়ে, নদীপথে) সেভাবেই আসবে।’
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, দেশে ব্যবহূত জ্বালানি তেলের ৯২ শতাংশ আমদানি করা হয়। বছরে দেশে জ্বালানি তেলের গড় চাহিদা ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৯ লাখ ১০ হাজার মেট্রি টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ৩০ লাখ ৮০ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল জি-টু-জি চুক্তির আওতায় এবং ২৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। এর বাইরে ১৪ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিপিসি। পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল, মোগ্যাস, জেট এ-১, ফার্নেস অয়েল এবং মেরিন ফুয়েল রয়েছে। পরিশোধিত তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় ডিজেল। দেশের ডিজেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ ঢাকায়। বর্তমানে ঢাকায় তেল পরিবহন করতে প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় তেল পরিবহন করা হয়। পরিবহনে ব্যবহূত হয় প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ। এতে বছরে ২০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়।
বলছেন, পাইপলাইনটি চালু হলে সড়ক ও জলপথে পরিবহনের জন্য কোনো টাকা ব্যয় হবে না। শুধু পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুত্ বিল, জমির ভাড়াসহ কিছু খাতে বার্ষিক ব্যয় হবে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। বছরে প্রকল্পটি থেকে আয় হবে ৩২৬ কোটি টাকা। সাশ্রয় হবে ২৫০ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা আগামী ১৬ বছরের মধ্যে উঠে আসবে।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ধরা হয় ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত হয়ে বেড়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। সেনাবাহিনী ২৪ ব্রিগেড পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করায় এখন নারায়ণগঞ্জ (গোদনাইল ডিপো) থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত জেট ফুয়েল পরিবহনে পাইপলাইন নির্মাণের কাজও তাদের দেওয়া হবে বিপিসির সূত্রে জানা গেছে। বিপিসি অর্থায়নে গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার। ফতুল্লা থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার।