সিপিডির আলোচনা

বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলে চীনা বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন

অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগের আমলে নেওয়া ১৪টি দেশের ৩৭টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অনিয়মের অভিযোগে বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে চীনের ৪টি, সিঙ্গাপুরের ৭টি এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ১টি করে প্রকল্প রয়েছে।

এসব প্রকল্পের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট। এর ফলে একদিকে দেশে জ্বালানি সংকট বাড়ছে, অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ফলে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনার বিষয় ছিল-‘বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে চীনের বিনিয়োগের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ : অগ্রগতির পথ।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের সভাপতি হান কুন প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক আবরার আহমেদ।

এ সময় নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। তাদের মতে, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবসা শুরুর জন্য একটি একক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নেই। বিনিয়োগকারীদের একাধিক ওয়েবসাইটে যেতে হয়। অনেক সরকারি অফিসে সশরীরে উপস্থিত থাকতে বাধ্য হতে হয়। এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে।

চাইনিজ ইনভেস্টর্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি হা কুন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এশিয়ায় প্রায় ৫৫ শতাংশ চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ। কিন্তু ২০৩০ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে উৎপাদনের যে লক্ষ্য বাংলাদেশ ঠিক করেছে তা উচ্চাভিলাষী।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এ খাতে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) এগিয়ে আসতে হবে। কারণ বিনিয়োগের সব সুবিধা নিশ্চিত করতে বিডা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে সময় এবং অর্থ দুটিই বাঁচবে। একাধিক লাইসেন্স জটিলতা নিরসনে সরকারকে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল সেবার কথা বলা হলেও সত্যিকার অর্থে এর অর্ধেক ডিজিটাল হয়েছে।

তার মতে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করা এবং বিনিয়োগের সুরক্ষা না থাকায় বিদেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। অনেকে জমিতে বিনিয়োগ করেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেউ চাইলেও তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত নিতে পারছে না।

বক্তারা বলেন-তীব্র জ্বালানি সংকটে দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ কমছে। ফলে বাড়ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার। জোগান বাড়াতে দেশে নতুন নতুন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনা এবং অনিয়মের অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া তিন হাজার ২৮৭ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ৩৭ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার। যেখানে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করছে তারা।

ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি ডলার। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এরই মধ্যে ১৫টি কোম্পানি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় প্রকল্প বাতিল করায় চীন উদ্বিগ্ন বলে জানান দেশটির বিনিয়োগকারীরা। তারা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে।

Related Articles

Back to top button