যুক্তরাষ্ট্রে আগুন নেভাতে গিয়ে স্নাইপার হামলার শিকার দমকলকর্মীরা, নিহত ২

অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো অঙ্গরাজ্যের কোয়ের দ্য এলেইন শহরের কাছে আগুন নেভাতে গিয়ে স্নাইপার হামলার শিকার হয়েছেন দমকলকর্মীরা। এতে অন্তত দুই জন নিহত ও আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় রোববার (২৯ জুন) দুপুরে কানফিল্ড পর্বতমালার দুর্গম এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার সময় দমকল ও জরুরি সহায়তা কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছিল বলে জানানো হয়েছে।

কুটেনেই কাউন্টির শেরিফ রবার্ট নরিস স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এখনো স্নাইপারদের গুলির মুখে আছি। যারা হামলা চালিয়েছে তারা সম্ভবত একাধিক। গুলিবর্ষণ এখনো চলছে।’

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা ‘উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেল’ ব্যবহার করেছে এবং তারা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে পার্বত্য বনের ঝোপঝাড়ে আত্মগোপন করে ছিল।

জরুরি রেডিও বার্তায় শোনা যায়, গুলিবিদ্ধ সহকর্মীদের উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছিলেন অন্য দমকলকর্মীরা। একজন জানাচ্ছিলেন, তারা একটি দমকল ট্রাকের পেছনে লুকিয়ে আছেন। কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন, আগুনটি পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়ে থাকতে পারে।

স্থানীয় হাসপাতাল কুটেনেই হেলথের মুখপাত্র কিম অ্যান্ডারসন জানান, হামলায় নিহত দুই জন ছাড়াও একজন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

শেরিফ নরিস বলেন, অভিযুক্তদের থামাতে না পারলে অভিযান কয়েক দিনও চলতে পারে। এ অবস্থায় কানফিল্ড পার্বত্য এলাকা এবং আশপাশের অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এই পর্বতমালা এলাকাটি হাইকিং, বাইকিং ও মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে জনপ্রিয়। হামলার সময়ও অনেকে সেখান থেকে নামছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্রায়ান হ্যাডলি জানান, তিনি পার্বত্য রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে নামার সময় তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে পার্কিং এলাকায় পৌঁছানোর পর পুলিশ তাকে দ্রুত এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তিনি বলেন, ‘এটা হৃদয়বিদারক। আমি এখনো আমার ছাদের ওপর দিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভেসে যেতে দেখছি।’

আইডাহোর গভর্নর ব্র্যাড লিটল এ হামলাকে ‘ভয়ানক ও জঘন্য’ বলে অভিহিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘এই নির্ভীক দমকলকর্মীদের ওপর সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে। আমি আইডাহোর সব মানুষের কাছে তাঁদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এফবিআই ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পর্বত থেকে লোকজন সরানোর আগে গুলির হুমকি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

এই মুহূর্তে কুটেনেই কাউন্টির কর্মকর্তারা ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এবং অতিরিক্ত সহায়তা চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

কাউন্টি কমিশনের চেয়ারম্যান ব্রুস ম্যাটারে বলেন, ‘এটি ভয়াবহ পরিস্থিতি। আগুন নেভানো পর্যন্ত গুলি বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সেখানে গুলিতে অন্তত ১৭ হাজার ৯২৭ জন নিহত হয়েছেন।

Related Articles

Back to top button