কেএমপি কমিশনার অপসারণে বিক্ষোভ জোরদার

অনলাইন ডেস্ক: খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবিতে সময় বেঁধে দিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। শনিবার তাদের আলটিমেটাম শেষ হয়। তবে পুলিশ কমিশনার অপসারণ না হওয়ায় কর্মসূচির তৃতীয় দিন তারা কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে জোরালো বিক্ষোভ করেন। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম শনিবার খুলনা প্রেস ক্লাবে এলে ছাত্র-জনতা তার কাছে কমিশনারের অপসারণের দাবি উত্থাপন করেন।
বিকাল ৪টা থেকে আন্দোলনকারীরা কেএমপি সদর দপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। তারা রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদের সূত্র জানায়, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে গণ-অভ্যুত্থানের সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া খুলনা প্রেস ক্লাব পরিদর্শনে আসেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ খবর পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তারা প্রেস সচিবের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে কেএমপি কমিশনারকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। বিষয়টি জানতে পেরে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ছাত্রদের বোঝাতে চেষ্টা করেন। তবে ছাত্ররা প্রেস সচিবের সঙ্গেই কথা বলার বিষয়ে অনড় থাকেন। পরে ক্লাব নেতাদের সঙ্গে মিটিং শেষ করে প্রেস সচিব ক্লাবের হলরুমে ছাত্রদের নিয়ে বসেন।
এ সময় ছাত্ররা বলেন, কেএমপি কমিশনার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের লালন-পালন করছেন। তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা ও পদোন্নতি দিচ্ছেন। এটি ছাত্রদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক সাজ্জাদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, বর্তমান কেএমপি কমিশনার তার আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে খুলনায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন সময়ে হামলা হচ্ছে অথচ পুলিশ প্রশাসনের এসব নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। এই পুলিশ কমিশনারের আমলে প্রতিদিন মারামারি, হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সেসব আসামি ধরতে পুলিশের কোনো সফলতা নেই।
এ সময় প্রেস সচিব ছাত্রদের কথা শোনেন। তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে একঠি লিখিত অভিযোগও নেন। পরে তিনি ছাত্রদের আশ্বস্ত করেন এসব বিষয় তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নেতাদের জানাবেন। একই সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কাজ করবেন। পরে তিনি রাত ৮টার দিকে খুলনা প্রেস ক্লাব ছেড়ে যান। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনা ও নৌ বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকাল থেকে কেএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এতে খানজাহান আলী সড়কের রয়্যাল মোড় থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ ছিল ‘সৌজন্যমূলক’ : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের বৈঠকটি ছিল সম্পূর্ণ সৌজন্যমূলক। এর পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল না। বিএনপি ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা জানতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে শনিবার বিকালে খুলনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকার কাজ করে চলেছে। খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রায় সোয়া ঘণ্টাব্যাপী এই মতবিনিময় সভায় প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেওয়া সম্পদের বিবরণী দুদক খতিয়ে দেখছে বলেও শফিকুল আলম জানান। একই সঙ্গে, তিনি দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে মোংলাবন্দর এলাকায় চীনা ব্যবসায়ীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা এবং খুলনা অঞ্চলের বন্ধ মিল-কারখানা বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে চালু করা। এ সবের পাশাপাশি একগুচ্ছ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েও সরকার কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।