গবেষণায় প্রকাশ, প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান বাড়ে ৩৩ শতাংশ

অনলাইন ডেস্ক: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে বিশেষভাবে তৈরি ‘স্টার প্লাস’ কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ছয় মাস মেয়াদি এই উদ্যোগের ফলে অংশগ্রহণকারীদের কর্মসংস্থান ও আয় উভয়ই বেড়েছে। কর্মসূচি শেষে প্রতি তিন জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে একজন বেতনভিত্তিক চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান বাড়ে ৩৩ শতাংশ—এমন তথ্য প্রকাশ করা হয় এই সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায়।
গত মঙ্গলবার ব্র্যাক সেন্টারে এসব কথা জানানো হয়। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এলএসএইচটিএম)-এর যৌথ গবেষণায় করে। কর্মসূচিটি পরিচালিত হয়েছে ব্র্যাকের ‘স্কিলস ট্রেনিং ফর অ্যাডভান্সিং রিসোর্সেস’ (স্টার) মডেলের প্রতিবন্ধীবান্ধব সংস্করণ হিসেবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্বে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ। এদের একটি বড় অংশ দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার। জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের আইনে কর্মসংস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, বাস্তব অনেক প্রতিবন্ধীই কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
এই প্রেক্ষাপটে স্টার প্লাস কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান বেড়েছে ৩৩ শতাংশ, কর্মঘণ্টা বেড়েছে ৪৯ শতাংশ, আর আয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কর্মসূচিটি বিশেষভাবে উপকারী হয়েছে তাদের জন্য, যারা অন্তত প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে ৫৪ শতাংশ এবং আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। তবে যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তাদের মধ্যে তেমন উন্নতি দেখা যায়নি।
স্টার প্লাস কর্মসূচির আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো, এটি শুধু ব্যক্তির নয়, পুরো পরিবারের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। অংশগ্রহণকারীদের পরিবারে কর্মক্ষম সদস্যদের আয় বেড়েছে, পরিবারগুলো পারিবারিক ব্যবসার জন্য বেশি ঋণ নিচ্ছে এবং খাদ্যনিরাপত্তাও বেড়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, সারা দিন না খেয়ে থাকার সম্ভাবনা ৪৬ শতাংশ কমে গেছে।
কর্মসূচি চলাকালীন প্রশিক্ষণ, সহায়ক যন্ত্রপাতি, প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ ও সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলো প্রশংসা পেয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ থেকে ৯২ শতাংশ এসব ব্যবস্থাপনার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
তবে কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর যারা চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের অর্ধেকের চাকরি তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। সবচেয়ে বেশি চাকরি হারানোর কারণ ছিল যাতায়াত সমস্যা এবং ছাঁটাই।
বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি সুসংগঠিত প্রতিবন্ধী অধিকার আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ‘আমাদের বিষয়ে আমাদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়’—এই মূলমন্ত্র গবেষণা ও নীতিনির্ধারণে প্রতিফলিত হওয়া জরুরি।’
এলএসএইচটিএমের এপিডেমিওলজির অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক হান্না কুপার বলেন, ‘প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তিমূলক গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগামী। স্টার প্লাস কর্মসূচি থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা অন্যান্য দেশেও কাজে লাগানো উচিত।’
গবেষণায় আরও উল্লেখ রয়েছে যে, স্টার প্লাস কর্মসূচি একটি শক্তিশালী মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, তবে এটি আরও উন্নতির সুযোগ রাখে। প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থানের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং পুরো প্রক্রিয়াকে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার আওতায় নেওয়া গেলে এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের এমইএলের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মৌসুমী মোশাররফ মৌ, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন (এলএসএইচটিএম)-এর সহকারী অধ্যাপক ড. মার্ক কেয়ারু, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআইজিডির গবেষণা পরিচালক ড. মুন্সি সুলাইমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন্দ নীলোরমি।