মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে নেই ব্যাগ তল্লাশিতে আপত্তি

কর্তৃপক্ষ বলছেন বাজেট সংকট: ডিআইজি এমআরটি পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক: চালু হওয়ার পর থেকেই স্বস্তির বাহন হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে মেট্রোরেল। যানজটের এই শহরে দ্রুত যাতায়াতের জন্য রাজধানীবাসীর একাংশ আধুনিক এই গণপরিবহনটি প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে এখন। প্রতিদিন মেট্রোরেলে চলাচল করছে চার লক্ষাধিক যাত্রী। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল সার্ভিস। আধুনিক এই সুবিধার সুফল ভোগ করার জন্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে। কেউ সপরিবার, আবার কেউ একা এসে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন টিকিট সংগ্রহ করতে। তারপর কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেলে চড়ে ইচ্ছা পূরণ করছেন সবাই। কিন্তু ৩২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ত্রুটিপূর্ণ। স্টেশনগুলোতে নেই লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে বা মেটাল ডিটেক্টর। এ নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যাত্রীরা। প্রায় প্রতিদিনই স্টেশনগুলোতে ব্যাগ চেক করা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে।

পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোরেলে দুষ্কৃতকারীরা যে কোনো নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে।

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের। আর মেট্রোরেল ও স্টেশনের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশনে প্রতিটিতে গড়ে দায়িত্ব পালন করছে ছয় থেকে সাত জন সদস্য। এর পাশাপাশি পাঁচ-ছয় জন আনসার সদস্য। কিন্তু চালুর পর থেকে এখনো নিরাপত্তার ঢিলেঢালা অবস্থা।

মেট্রো রেল স্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেট্রোরেলের প্রবেশমুখে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (আনসার) সদস্যরা গেট খুলে দিচ্ছেন। এরপর যাত্রীরা হুড়মুড় করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন। সেখানে কাউন্টারের সামনে গিয়ে আবার লাইন ধরে অপেক্ষা করেন টিকিট সংগ্রহের জন্য। কিন্তু উত্তরা কিংবা মতিঝিল মেট্রো রেল স্টেশনে তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা চোখে পড়েনি। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্টেশনের প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছেন।

কোনো ধরনের তল্লাশি ছাড়াই স্টেশনে ঢুকতে পারছে সাধারণ মানুষ। প্রবেশমুখগুলোয় নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য নেই কোনো মেটাল ডিটেক্টরও। এছাড়া কেউ কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলেও তল্লাশি কিংবা স্ক্যান করার জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। অনেকেই ব্যাগ নিয়ে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। টিকিট পেয়ে মেট্রোরেলে অবাধে ভ্রমণ করছেন। এরকম অবাধে মালপত্র নিয়ে লোকজনের চলাচলের বিষয়টিকে এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি হিসেবে দেখছেন সাধারণ যাত্রীরা।

রামপুরা থেকে মাকে নিয়ে মেট্রোরেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আবুল কালাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ঢোকার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। প্রবেশমুখের কেচিগেট খুলে দিল, আমরা ঢুকে পড়লাম। এখানে ছিল না কোনো আর্চওয়ে গেট কিংবা মেটাল ডিটেক্টর।’

বরিশাল থেকে আসা নাদিম মাহমুদ বলেন, ‘নিরাপত্তা তল্লাশির জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। এত টাকা খরচ করে সরকার উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে, এসব বিষয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আনা উচিত ছিল।’

মেট্রোরেলে চড়তে আসা আবদুল হালিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। প্রতিরোধমূলক কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। মেট্রো স্টেশনে ঢোকার সময় কেউ কোনো চেকও করেনি। শুধু পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।

মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনে দায়িত্বরত এমআরটি পুলিশের একজন সদস্য বলেন, মেটাল ডিটেক্টর না থাকায় যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত নাজেহাল হতে হচ্ছে।

এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে এমআরটি পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার জন্য আমাদের তরফ থেকে প্রতিটি স্টেশনে লাগেজ স্ক্যানার ও আর্চওয়ে বা মেটাল ডিটেক্টর বসানোর জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের কাছেও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাজেট সংকটের কারণে আপাতত বসানো সম্ভব হচ্ছে না।

Related Articles

Back to top button