ক্লে কোর্টের ‘রাজা’ নাদালকে বিদায় জানালো প্যারিস

অনলাইন ডেস্ক: প্যারিসের স্টাড রোল্যান্ড গ্যারোসের কোর্টে রোববার থেকে শুরু হয়েছে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ১২৯তম আসর। এবারের আসরের প্রথম দিনের বিকালটাই যেন কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিল। কেন না টেনিসে গেল ২০ বছর ধরে রাজত্ব করা ক্লে কোর্টের রাজা রাফায়েল নাদালের জন্য এদিন সাজানো হয়েছিল বিদায়ী মঞ্চ। টেনিস কোর্ট থেকে নাদাল বিদায় নিয়েছিল গেল বছরই।
তবে তার কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি। সেটাই অনুষ্ঠিত হয়ে ফ্রঞ্চ ওপেনের উদ্বোধনী দিন। যেখানে কিংবদন্তিকে বিদায় বলতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল স্টেডিয়াম। শুধু সমর্থক নয়, নাদালকে বিদায় জানাতে এসেছিল তার সাবেক সতীর্থরাও পাশাপাশি তারকা ফুটবলার, অভিনেতাসহ আরও বড় বড় তারকারাও হাজির হয়েছিলেন এ বিশেষ মুহূর্তে।
রোববার বিদায়ী মঞ্চে এসে আবেগী হয়ে পড়েন নাদাল। এদিন পড়ে এসেছিলেন কালো কালারের একটি স্যুট, সচরাচর এমন পোশাকে তাকে দেখে অভ্যন্ত নেয় ক্রীড়াপ্রেমীরা। সব সময় তো নাদালকে হেডব্যান্ড পড়া ব্যাট হাতে কোর্টে রাজত্ব করতেই দেখেছে এতদিন সবাই। নাদাল যখন কোর্টে এসে পৌঁছাল সেসময় গ্যালারিতে থাকা হাজারো সমর্থকের গলায় একসুরে ‘মে-র্সি রাফা’, যা অর্থ ‘ধন্যবাদ রাফা। একই বার্তা লেখা কমলা রঙের টি-শার্টও পড়া ছিল উপস্থিত সবাই।
এ সময় দর্শকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নাদাল যেন খানিকক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সেসময় তার দুচোখ বেয়ে পড়ছিল পানি। পরে নিজের বিদায়ী বার্তায় নাদাল বলেন, ‘আমি জানি না, কোথা থেকে শুরু করবো… গত ২০ বছর ধরে এই কোর্টে খেলেছি, জিতেছি, হেরেছি, কেঁদেছি…. কিন্তু প্রতিবার এখানে এসে হৃদয় দিয়ে বিশেষ কিছু অনুভব করেছি।’
এ দিন সমর্থকদের জন্য টেনিসের ‘বিগ ফোর’কে এক মঞ্চে দাঁড় করিয়েছিল ফেঞ্চ ওপেন কর্তৃপক্ষ। নাদালের পাশে ছিল রজার ফেদেরার, নোভাক জকোভিচ ও অ্যান্ডি মারে। এক সময় যারা কোর্টে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন, এবার তারা একসাথে দাঁড়ালেন সম্মানে। রজার ফেদেরার ও অ্যান্ডি মারে আগেই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। আর বিগ ফোরের তৃতীয় জন হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে অবসরে যান নাদাল। তাদের মধ্যে বাকি রয়েছেন শুধু জকোভিচ। ‘বিগ ফোর’-এর এই পুনর্মিলন যেন টেনিস ইতিহাসেরই এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা করলো।
২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী নাদাল তাদের নিয়ে বলেন, ‘আমি জানতাম না, তবে কল্পনা করেছিলাম যে, তারা আসবেন নোভাক এখানে খেলছে, তাই (তার জন্য) এটা সহজ। কিন্তু অ্যান্ডি ও রজারের এখানে আসা আমার জন্য অনেক কিছু, কারণ তারা আমার ক্যারিয়ারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। কিছু ক্ষেত্রে আমরা একে অপরকে আরও ভালো করতে তাড়িত করেছিলাম। আমরা চারজন সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। কখনো দুজন (প্রতিদ্বন্দ্বী) হলে, একজন কিছুটা অনুপ্রেরণা হারাতে পারে। কারণ আরেক জন হারতে শুরু করতে পারে অথবা চোটাক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এখানে সেটা কখনো কল্পনাতেও আসত না, কারণ সব সময় চার জনের একজন টুর্নামেন্ট জিততো।’
গেল পরশুর মঞ্চে জায়গা পেয়েছিল নাদালের পরিবারও। চিরকালীন কোচ ও চাচা টনি নাদাল, স্ত্রী ও ছোট সন্তান। একে একে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ফ্রান্স ও প্যারিসবাসীর প্রতি। বলেন, ‘তোমরা আমাকে এমন কিছু অনুভব করিয়েছ, যা আমি কোনো দিন কল্পনাও করিনি। আমার হৃদয়, আমার স্মৃতি সবসময় এই জায়গার সঙ্গেই থাকবে। তোমরা আমাকে এক ফরাসির মতো ভালোবেসেছ।’
বিদায় বেলায় শুধু শব্দ নয়, থাকল স্থায়ী স্মৃতিও। রোলাঁ গারোর কেন্দ্রীয় কোর্টে স্থাপন করা হলো নাদালের নামাঙ্কিত একটি বিশেষ ফলক, যেখানে খোদাই করা ১৪টি শিরোপার তালিকা এবং তার জুতার ছাপ যেন প্রতীক হয়ে রইল কিংবদন্তির ছোঁয়া। শেষবারের মতো কোর্টে নামার পর এটাই ছিল তার শেষবারের মতো রোলাঁ গারোর দর্শকদের সামনে খেলা। তবে নাদালের কণ্ঠে ছিল চিরন্তন ভালোবাসা ও আবেগ, ‘আমি হয়তো আর এখানে খেলতে পারব না, তবে আমার হৃদয় ও স্মৃতিতে এই স্থান এবং এখানকার মানুষ চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে। সবকিছুর জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আমাকে যা অনুভব করিয়েছ, তা সারা জীবনের জন্য।’