গাজায় সামরিক অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধির পরিকল্পনা ইসরায়েলের 

অনলাইন ডেস্ক: গাজায় সামরিক অভিযানের মাত্রা বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ইসরায়েলি নিরাপত্তা ক্যাবিনেটে অনুমোদিত হয়েছে বলে শুক্রবার দেশটির সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়। এদিকে ইসরায়েলের বিমান হামলায় এক দিনে ৪৩ জন নিহত হয়েছে। এর পাশাপাশি অনাহারে শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে ইনেত নামক সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, হামাস যতদিন জিম্মিদের ছেড়ে না দিচ্ছে, আমরা সামরিক অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে থাকব। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আমরা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে গাজায় আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো হামাসকে পরাজিত করা। ঐ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রবিবার পূর্ণাঙ্গ ক্যাবিনেটে পরিকল্পনাটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।

প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে কার্যালয়ের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে প্রতিবেদনের দাবি সত্য হলে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মিশর এবং কাতার। তবে ইসরায়েল ও হামাস কেউই নিজেদের মূল দাবি থেকে সরে আসেনি। কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার জন্য উভয় পক্ষই বরং পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে। ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনো ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে এবং হামাসকে নিরস্ত্র করে ভবিষ্যতে গাজার শাসন থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া না হলে কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। অন্যদিকে, হামাসের দাবি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার না হলে আর কোনো বন্দিবিনিময় চুক্তি হবে না। চুক্তির বিষয়ে হামাসকে দোষারোপ করে নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, মিশরের প্রস্তাবিত চুক্তি তারা প্রত্যাখ্যান করেনি। হামাসই বরং চুক্তি সম্পাদনের পথে বাধা তৈরি করছে।

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান অভিযানে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৪৩ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৭৭ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। শুক্রবারও গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঐ দিন ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৫২ হাজার ৪১৮ জন এবং ১ লাখ ১৮ হাজার ৯১ জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। জিম্মিদের মুক্ত করতে ঐ দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মি ও ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি ইস্যুতে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে বিরতির দুই মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত প্রায় দেড় মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন নতুন ২ হাজার ৩ শতাধিক এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হাসপাতালেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এতে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। পরিস্থিতি এতটাই অমানবিক যে, গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশুরা মারা যাচ্ছে অনাহারে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে। এমন তথ্যই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। এমনকি গাজার শিশুরা গুরুতর মাত্রায় অপুষ্টির শিকার হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Related Articles

Back to top button