আদালতে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান

‘শেখ হাসিনার পাশে না থাকলে ভাইয়ের মতো আমাকেও ক্রসফায়ার দেওয়া হতো’

অনলাইন ডেস্ক: শেখ হাসিনার সঙ্গে না থেকে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে থাকলে বড় ভাইয়ের মতো আমাকেও ক্রসফায়ারে মরতে হতো বলে আদালতকে জানিয়েছেন এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

আজ বুধবার ছাত্র আন্দোলনের দুই হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানিকালে বিচারককে এ কথা বলেন নজরুল ইসলাম মজুদদার।

আজ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে এই রিমান্ড শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাজধানীর ধানমন্ডি থানা ও যাত্রাবাড়ী থানার ওই দুই মামলায় তার ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

আদালতকে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি হার্টের রোগী। অনেক কষ্ট হচ্ছে। ওই সময় শেখ হাসিনার পাশে না থাকলে আমাকে আমার বড় ভাই কুমিল্লার সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম যিনি ৫ বছর এমপি ছিল। বড় ভাইকে ক্রসফায়ারে মারা হয়েছে। আমারও সেই অবস্থা হতো। আমার রিমান্ড বাতিল করে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এটা আমার একটা সাবমিশন।’

আজ শুনানিকালে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘আন্দোলন যখন চলছিল সকল ব্যাংকাররা এবং ব্যবসায়ীরা একটা মিটিং করেছিল। সেই মিটিংয়ে উনি বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন এবং শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি চালিয়ে যান, আমরা আপনার পাশে আছি। ” তার এই বক্তব্য সকল মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।’

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন,‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সব জায়গায় তার নিজস্ব লোক নিয়োগ করেছিল। ব্যবসায় এবং ব্যাংকারদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নজরুল ইসলাম মজুমদারকে হাসিনা নিয়োগ করেছিলেন। ব্যাংক থেকে টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে শেখ পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য সবকিছু করেছিলেন তিনি। তাদের নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছে। তারা কোনোভাবেই এই দায় এড়াতে পারেন না।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, ‘তিনি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশের অনেক বড় শিল্প উদ্যোক্তা। তার অধীনে ৫ লাখ লোক কাজ করে। তিনি এখন জেলে। কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে এসব লোক বেকার হয়ে যাবে। তার বিরুদ্ধে মামলায় কোনো অভিযোগ নাই। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য না। জেল হাজতে থাকাকালীন তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। তাকে একাধিক মামলায় আগে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার শারীরিক যে অবস্থা রিমান্ডে নেওয়ার মত কোনো সুযোগ নেই। রিমান্ড বাতিল করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হোক।’

ধানমন্ডি থানার মামলার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট বিকেল ৫টায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ছাত্র জনতার সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন ছাত্র শামীম (১৩)। মিছিলটি কলাবাগান এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অতর্কিত আক্রমণে আহত হন শামীম। এরপর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে পরের দিন ৬ আগস্ট চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় গত ৩ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২৮ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মা জাহানারা বেগম।

যাত্রাবাড়ীর মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার চিটাগাং রোডে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ইমন হোসেন গাজী নামের এক যুবক। এ ঘটনায় তার ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ২৮ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

Related Articles

Back to top button