হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু

জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সেনা প্রতিনিধিদলের বৈঠক

অনলাইন ডেস্ক: কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনা স্বচ্ছতার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ভিকটিম পরিবারকে এ আশ্বাস দেওয়া হয়। শনিবার রাতে সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কাজ এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

জড়িতদের বিচারের দাবিতে রোববার সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সমাবেশে বক্তারা তৌহিদুলের হত্যাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করাসহ প্রশাসন থেকে হাসিনার দোসরদের সরাতে এক মাসের আলটিমেটাম দেন।

এদিকে ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও এখনো মামলা করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শিগগির তারা মামলা দায়ের করবেন।

আজ তৌহিদুল ইসলামের কুলখানির আয়োজন করা হয়েছে। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধিদল ছাড়াও কেন্দ্রীয় যুবদল এবং বিএনপির পৃথক টিম যোগ দেবে।

গত ৩১ জানুয়ারি যৌথবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ হারান যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম। ওইদিন দুপুরে গুরুতর আহত অবস্থায় গোমতী নদীর তীর থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনায় জড়িত থাকার প্রাথমিক অভিযোগে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার দায়িত্বশীল সেনা কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হয়।

পরিবারের দাবি, কোনো প্রকার অভিযোগ ছাড়াই তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্মম নির্যাতনে প্রাণ হারান তৌহিদুল। তার শরীরে নির্যাতনের ক্ষতগুলোর কথা বলে বলে মূর্ছা যাচ্ছে স্ত্রী-সন্তান এবং স্বজনরা। রোববার নিহতের বাড়ি আদর্শ সদর উপজেলার ইটাল্লা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকাবহ পরিবেশ বিরাজ করছে। বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার লোকজন সেখানে অবস্থান করছেন। শোকার্ত স্বজনের আহাজারিতে আশপাশের পরিবেশটা ভারী হয়ে উঠেছে।

সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় আদর্শ সদর সেনাক্যাম্পে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। হত্যার শিকার তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার, বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু, ভগ্নিপতি খান এ আলম, ভাগনি মাহবুবা উদ্দিন, সানজিদা খানম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব রাশেদুল হাসান। এ সময় দুই পক্ষের আলোচনা শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাঁচটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ডাকা হয়েছিল। উনারা বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামীর শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। কী পরিমাণ নির্যাতন করার পর একজন সুস্থ-সবল যুবক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে তা আপনারাই ভাবেন। তিনি জানান, আমরা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখানে ঘটনায় কারা জড়িত এখনো তাদের পরিচয় জানতে পারিনি।

নিহতের ভাগনি সানজিদা খানম যুগান্তরকে জানান, বৈঠকে সেনাবাহিনী আমাদের পাঁচটি বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, এরই মধ্যে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হওয়ামাত্রই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী সার্বক্ষণিক তৎপর থাকবে। পরিবারের নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষায় তারা সচেষ্ট থাকবেন। নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে ভিকটিম পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

নিহতের ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের তদন্ত কাজে সহযোগিতার আহ্বান করা হয়েছে। তারা বলেছেন, ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলো তারা খতিয়ে দেখছে। তাছাড়া আমরাও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বৈঠকে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব রাশেদুল হাসান বলেন, যুবদল নেতা তৌহিদুলের মৃত্যুর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে আমরা সোচ্চার আছি। সেনা কর্মকর্তারা স্বচ্ছ তদন্ত এবং যথাযথ বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, তৌহিদুলকে কার অভিযোগের ভিত্তিতে তুলে নেওয়া হয়েছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে নির্যাতনের নেপথ্যে কী কী কারণ রয়েছে তাও তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বিক্ষোভ সমাবেশ : প্রশাসন থেকে হাসিনার দোসরদের সরাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে এক মাসের আলটিমেটাম দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, এক মাসের মধ্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সরাতে হবে। অন্যথায় আইনজীবীরা কালো কোট পরে রাস্তায় নামবেন। রোববার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট বার ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে জয়নুল আবেদীন এসব কথা বলেন।

এ সময় অবিলম্বে কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ভাবতে পারিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পরও আমাদের ভাই হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে দাঁড়াতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট হাসিনার মদদপুষ্টরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন। তাই অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে তৌহিদুলের মতো আর কোনো রাজনৈতিক কর্মী যেন হত্যার শিকার না হয়।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সামসুল ইসলাম মুকুল, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান বিশ্বাস রায়হান, অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

যুবদল কুমিল্লা

Related Articles

Back to top button