প্রথম মামলায় শেখ হাসিনা, পুতুলসহ আসামি ১৬ জন

অনলাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে রাজউকের পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের সঙ্গে মামলায় আসামি করা হয়েছে জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের ১৬ কর্মকর্তাকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর জানা যায়, তাঁর পরিবারের ছয় সদস্যকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ বাতিলে হাইকোর্টে রিট আবেদনের পর তদন্তের উদ্যোগ নেয় দুদক। এর পর রোববার এ নিয়ে প্রথম মামলা হলো।

কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে সংস্থার মহাপরিচালক (ডিজি) আক্তার হোসেন জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে।’

মামলার অন্য আসামিরা হলেন– জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাফিজুর রহমান, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমান, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম ও সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম।

মামলায় পুতুলকে প্রধান এবং দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে তাঁর মা শেখ হাসিনাকে। সোমবার শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তির বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হতে পারে বলে জানা গেছে।

দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছর কারাদণ্ড।

অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। তাঁর মেয়ে পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নয়াদিল্লিতে আছেন।

গত ২৭ ডিসেম্বর পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামার কথা জানায় দুদক। অভিযোগ রয়েছে, মেয়ে পুতুলের পাশাপাশি ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিকে পূর্বাচলের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ দেন শেখ হাসিনা।

রাজউকের এ প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য ২০০৮ সালে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছিল। আবেদনের শেষ সময় ছিল ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর।

দুদকের মামলায় বলা হয়, ১০ কাঠার ওই প্লট পেতে পুতুল রাজউকের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং নির্ধারিত ফরমেও আবেদন করেননি। তার পরও শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়েকে প্লটটি পাইয়ে দেন।

এজাহারে বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের স্বাক্ষরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পুতুলকে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় ১০ কাঠা আয়তনের ওই প্লট বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে রাজউককে ওই প্লট বরাদ্দ দিতে বলা হয়।

মামলায় বলা হয়, পুতুলের আয়কর বিবরণীতে ধানমন্ডির সুধা সদনের (বাবা ওয়াজেদ মিয়ার সূত্রে প্রাপ্ত) কথা রয়েছে। তা ছাড়া গুলশান-১-এর ৭ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়িটিও তাঁর। এজাহারে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার ছেলে জয়, বোন শেখ রেহানা, তাঁর সন্তান রাদওয়ান ও আজমিনার নামেও রাজউক এলাকায় প্লট রয়েছে।

দুর্নীতির পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতের ঘটনাগুলোর জন্য শেখ হাসিনার বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণহত্যার অভিযোগের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

Related Articles

Back to top button