চীনের চাপ বাড়ায় প্রতিরক্ষায় বেসরকারি খাতকে আনছে তাইওয়ান

অনলাইন ডেস্ক: তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলের আকাশে উড়ে চলা একটি সাধারণ হালকা বিমান এখন দেশের প্রতিরক্ষায় সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। মার্কিন প্রযুক্তির উন্নত রাডার যুক্ত বিমানটি নিয়মিতভাবে চীনা যুদ্ধজাহাজের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে। বিমানটি পরিচালনা করছে ছোট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এপেক্স অ্যাভিয়েশন, যারা সরকারের ‘সমগ্র সমাজের প্রতিরক্ষা’ কৌশলে সরাসরি যুক্ত হতে চায়।

চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপ মোকাবিলায় তাইওয়ান ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতকে সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য বিশ্লেষণ, নজরদারি ও লজিস্টিক সহায়তার মতো কাজে যুক্ত করা শুরু করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রে বহুদিন ধরে প্রচলিত একটি সহযোগিতা ব্যবস্থা।

সরকার জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম কেনার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বড় অংশই আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

এপেক্স অ্যাভিয়েশন জানায়, তারা স্বাধীনভাবে নজরদারির কাজ পরিচালনা করতে চায় এবং প্রয়োজন হলে ব্যবহৃত সরঞ্জাম সরকারকে হস্তান্তর করতেও প্রস্তুত। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান উইলসন কাও বলেন, ‘চীনের সামরিক মহড়া এখন ঘন ঘন ও আরও কাছাকাছি হচ্ছে। এখন পদক্ষেপ না নিলে ঝুঁকি বাড়বে।’

তবে প্রতিষ্ঠানটি এ প্রকল্প থেকে সম্ভাব্য আয় সম্পর্কে কিছু জানাতে রাজি হয়নি।

এদিকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, আপাতত তারা নিজেরাই চীনা কার্যক্রম নজরদারি করতে সক্ষম, যদিও নতুন ধারণা নিয়ে আলোচনা করতে তারা আগ্রহী। কোস্টগার্ড জানিয়েছে, প্রথমে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা হবে; প্রয়োজনে পরে মানববাহী বিমান ব্যবহারের দিকেও যাওয়া হবে।

ইতালিতে তৈরি ১১ আসনের টেকনাম P2012 বিমানটিকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন নতুন তাইওয়ান ডলার খরচে রিকনাইসেন্স প্লেনে পরিণত করেছে এপেক্স। বিমানে যুক্ত করা হয়েছে সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার, যা মাত্র ০.০৯ বর্গমিটারের ক্ষুদ্রতম বস্তুও শনাক্ত করতে সক্ষম। এপেক্স জানায়, তাদের সংগৃহীত তথ্য সরাসরি সামরিক বাহিনী ও কোস্টগার্ডে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশও কম খরচে এই নজরদারি সেবা নিতে পারবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, বেসামরিক বিমান সামরিক নজরদারিতে ব্যবহার করতে হলে স্পষ্ট আইন প্রয়োজন। পাশাপাশি এসব বিমান চীনের বাধা বা আক্রমণের ঝুঁকিতেও থাকে। তবু এসব হালকা বিমানের খরচ সামরিক নজরদারি বিমানের তুলনায় প্রায় দশভাগের একভাগ।

উইলসন কাও বলেন, সব ঝুঁকি জেনেই আমরা এগোচ্ছি। আমরা পিছিয়ে যাওয়ার মানুষ নই।

বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন এখন সরকারের নজর কাড়ছে। জনপ্রিয় মডেল কার ও ড্রোন নির্মাতা থান্ডার টাইগার তৈরি করেছে সি-শার্ক ৮০০ নামের সমুদ্র ড্রোন, যা ১,২০০ কেজি বিস্ফোরক বহন করে ৫০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে। সাম্প্রতিক প্রদর্শনীতে এটি ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, চীনের চাপ মোকাবিলায় এখনই নতুন কৌশল প্রয়োজন। সেনাবাহিনীর ওপর চাপ এত বেশি যে সামরিক-বেসামরিক যৌথ উদ্যোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

সূত্র: রয়টার্স

Related Articles

Back to top button