জুলাই সনদে ফর্মুলা, যেভাবে গঠিত হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার

অনলাইন ডেস্ক: আগামীতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে গঠন করা হবে, সেবিষয়ে স্পষ্ট ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে জারিকৃত ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’-এ। বিশেষ করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে কীভাবে বাছাই করা ও নিয়োগ দেওয়া হবে; সেসম্পর্কে কয়েকটি ধাপের প্রক্রিয়া উল্লেখ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা কে হতে পারবেন, কে হতে পারবেন না- সেটিও বলা আছে জুলাই সনদে।
জুলাই সনদে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান যুক্ত করা হবে। পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। এই কমিটির সদস্য হবেন- প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদের স্পিকার সভাপতিত্ব করবেন। উল্লেখ্য, জুলাই সনদে বলা হয়েছে- সংসদের ডেপুটি স্পিকার মনোনীত হবেন প্রধান বিরোধীদল থেকে।
সনদে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা পদে রাষ্ট্রপতিকে বাছাই করা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টার বয়স ৭৫ বছরের বেশি হতে পারবে না। এছাড়াও বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন। তবে দৈব দুর্বিপাকে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে আরো সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রায় নয় মাস ধরে রাজনৈতিক দল-জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী সব দল-জোটই একমত হয়েছে। তবে, প্রধান উপদেষ্টা বাছাই প্রক্রিয়ার কোনো কোনো ধাপের প্রক্রিয়ার বিষয়ে দলগুলোর কারও কারও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ‘ভিন্নমত’ রয়েছে। এই ভিন্নমত দেওয়ার তালিকায় বিএনপিও রয়েছে। যেমন একটি স্তরের প্রক্রিয়ার বিষয়ে ভিন্নমত দিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই স্তরটি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্ধারণ করা যেতে পারে।’ আবার কোনো কোনো স্তরের প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানানো দল-জোটগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উক্ত স্তরের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তারা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করবে, জনগণের ম্যান্ডেট পেলে সেই হিসেবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাক্ষরিত জুলাই সনদেও ভিন্নমতের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। কোন স্তরের কোন প্রক্রিয়া সম্পর্কে কতটি দল একমত, কতটি দলের ভিন্নমত, কী ভিন্নমত- সেটি উল্লেখ ছিল সনদে। তবে, গত ২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যেই সুপারিশ দাখিল করেছে, সেটির সঙ্গে জমা দেওয়া জুলাই সনদের কপিতে এসব ‘ভিন্নমত’ রাখা হয়নি। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপিসহ দলটির মিত্র দল-জোটগুলো।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তসমূহ ঘোষণা করেন। তার ভাষণের আগে ওইদিনই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’। এতে পরে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ওইদিনই আদেশের গেজেট প্রকাশ হয়।
জারিকৃত আদেশ অনুযায়ী ফেব্রয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনেই একত্রে পৃথক ব্যালটে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। চারটি বিষয়ে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে জনগণ মতামত জানাবেন। চারটি বিষয়ের প্রথমটিই (ক) হলো- ‘নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।’ অর্থাত্, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে জুলাই সনদে যেই ফর্মুলা উল্লেখ রয়েছে, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে পরবর্তীতে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’-এ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করে সেই ফর্মুলাই অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে করা আপিলের ওপর দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ইতোমধ্যে শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। দশ কার্যদিবস ধরে শুনানির পর রায় ঘোষণার জন্য গত ১১ নভেম্বর এই দিন ধার্য করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ।
জুলাই সনদে তত্ত্বাবধায়কের যেই ফর্মুলা
সনদে বলা হয়েছে, “সংবিধান সংশোধন করে নিম্নরূপ বিধান সংযুক্ত করা হবে। (১). মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। (২). সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮খ সংশোধনপূর্বক সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। (৩) মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন পূর্বে আইনসভার নিম্নকক্ষের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি; যদি একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্য (যদি সংসদে আসন সংখ্যার থেকে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত হবে) মোট ৫) সদস্য সমন্বয়ে একটি ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জাতীয় সংসদের স্পিকার সভাপতিত্ব করবেন।”
এতে বলা হয়, “(৪). কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের নিকট হতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)-এ বর্ণিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহ্বান করবে এবং এক্ষেত্রে প্রতিটি দল ১ জন এবং একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ১ জন মাত্র ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। (৫). রাজনৈতিক দলসমূহ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে তাদের প্রস্তাবিত নাম দাখিল করবে। কমিটি নিজ উদ্যোগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তির নাম অনুসন্ধান ও অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। (৬). পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যগণ সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত এবং রাজনৈতিক দলসমূহ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নিকট হতে প্রস্তাবিত নামসমূহ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করত বাংলাদেশের যে সকল নাগরিক সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)-এর অধীনে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য হতে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। (৭). বাছাই কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য অনুচ্ছেদ ৫৮গ-এ বর্ণিত শর্ত অনুসরণপূর্বক সংসদের সরকারি দল/জোট ৫ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট ৫ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। এছাড়া, সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল ২ জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। যদি সংসদে আসন সংখ্যার বিবেচনায় একাধিক দল দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের অবস্থানে থাকে তাহলে সেসব দলের মধ্যে নির্বাচনে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভোটপ্রাপ্ত দলটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিবেচিত হবে। উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত নামসমূহ স্পিকার জনসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবেন।”
ফর্মুলায় বলা হয়, “(৮). উপযুক্ত দফা (৭)-এ বর্ণিত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল/জোটের প্রস্তাবিত ৫ জন ব্যক্তির নামের তালিকা হতে প্রধান বিরোধী দল/জোট যেকোনো ১ জনকে বেছে নিবে; অনুরূপভাবে প্রধান বিরোধী দল প্রস্তাবিত ৫ জন ব্যক্তির নামের তালিকা হতে সরকারি দল যেকোনো ১ জনকে বেছে নিবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাবিত মোট ২ জনের নামের তালিকা হতে সরকারি দল/জোট যেকোনো একজনকে বেছে নিবে এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট যেকোনো ১ জনকে বেছে নিবে। এই পদ্ধতিতে প্রাপ্ত নামসমূহের মধ্য হতে যেকোনো একজনের ব্যাপারে যদি প্রস্তাবকারী দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত হবেন। অথবা কোনো একজনের ব্যাপারে কমিটির ৫ জন সদস্যের মধ্যে যদি ৪ জন সদস্য একমত হন তাহলে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।”
“(৯). যদি উপযুক্ত পদ্ধতিতে কোনো একজনের বিষয়ে প্রস্তাবকারী পক্ষসমূহ একমত হতে না পারে তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগের দুইজন প্রতিনিধি বাছাই কমিটিতে সদস্য হিসেবে যুক্ত হবেন; তবে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কারো নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না। উক্ত দুইজন প্রতিনিধির মধ্যে ১ জন আপীল বিভাগের বিচারপতি হবেন এবং ১ জন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হবেন। উক্ত ২ জন বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধিকে মনোনীত করার জন্য- (১) সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, (২) কর্মরত প্রধান বিচারপতি এবং (৩) আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হবে। (১০). এই পর্যায়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট উক্ত বাছাই কমিটির সদস্যগণ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে গোপন ব্যালটে ‘র্যাংকড চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে উক্ত সংক্ষিপ্ত তালিকা হতে যেকোনো ১ জনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবেন।”
ফর্মুলায় বলা হয়, “(১১). উপযুক্ত যেকোনো পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন; তবে শর্ত থাকে যে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় তিনি শপথ গ্রহণ করবেন না। (১২). উপযুক্ত পদ্ধতিসমূহের মাধ্যমেও যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বেছে নেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করতে হবে; তবে শর্ত থাকে যে, এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া যাবে না। (১৩). কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পূর্ববর্তী র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগদান করবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো পদ শূন্য হলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্য পদ পূরণের অধিকার রাখবেন।”
“(১৪). নিয়োগলাভের পর প্রধান উপদেষ্টা উপযুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)-এ বর্ণিত উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য হতে অনধিক ১৫ জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বেছে নিবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ প্রদান করবেন। (১৫). মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙ্গে গেলে, ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে এবং উক্ত কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন তথা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে উক্তরূপ অভিন্ন পদ্ধতিতে ১ জন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নিবে এবং তিনি অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন।”
সনদে বলা হয়, “(১৬). সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৮গ(৭)(ঘ) সংশোধনপূর্বক ‘বাহাত্তর বত্সরের অধিক বয়স্ক নহেন’ শব্দসমূহের পরিবর্তে ‘পঁচাত্তর বত্সরের অধিক বয়স্ক নহেন’ শব্দসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে। (১৭). তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন এবং উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। (১৮). সংবিধানে বর্ণিত বিধানাবালী সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য, এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে। (১৯). নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে অনধিক ৯০ দিন। তবে, দৈব দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে নির্বাচকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরো সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে। (২০). নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তার পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে। (২১). ত্রয়োদশ সংশোধনীর অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২) এর বিধানে উল্লেখিত ব্যবস্থা বহাল থাকবে।”



