বিচ্ছিন্ন এক জনপদ খালিয়াজুরী

অনলাইন ডেস্ক: দেশের সমতল ভূখণ্ডের সঙ্গে সড়ক সংযোগ না থাকায় নিম্নাঞ্চলীয় হাওরদ্বীপ খালিয়াজুরী আজও বিচ্ছিন্ন এক জনপদ। উপজেলা সদর থেকে বোয়ালীবাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে শুকনো মৌসুমে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। যাত্রীদের কয়েক দফা বাহন পরিবর্তন করতে হয়, আর ভাড়া দিতে হয় জনপ্রতি অন্তত দুই শত টাকা। বর্ষাকালে প্রায় সাত মাস এই পথ থাকে পানির নিচে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবমার্সিবল এ সড়কে তখন ভরসা থাকে ইঞ্জিনচালিত নৌকার ওপর, তা-ও চলে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। সন্ধ্যা নামলেই বন্ধ হয়ে যায়ে নৌযান চলাচল। রোগী পরিবহন বা জরুরি প্রয়োজনে তখন মানুষ পড়েন ভয়াবহ বিপাকে।
যোগাযোগব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থার কারণে আধুনিক নাগরিক সুবিধা এখানকার মানুষের কাছে আজও অধরা। সরকারি চাকরিজীবীরাও এখানে পোস্টিং নিতে অনাগ্রহী; ফলে অধিকাংশ দপ্তরেই বছরের পর বছর শূন্য পদ পড়ে থাকে। এই বাস্তবতা স্বীকার করে খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির হোসেন শামীম বলেন, দুর্গম যোগাযোগের কারণে এখানে চাকরি এবং জীবন ধারণ করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। খালিয়াজুরীর অর্থনীতি নির্ভর করে ধান আর মাছের ওপর। কিন্তু দুর্বল যোগাযোগের কারণে এই দুই খাতেই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর এখানকার হাওর থেকে উৎপন্ন হয় প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন দেশীয় মাছ। কিন্তু সময়মতো রাজধানী ও বড় বাজারে পৌঁছাতে না পারায় প্রচুর মাছ নষ্ট হয়ে যায়।’ খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ উপজেলায় এক বছরে খান উৎপাদন হয় প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু যোগাযোগ দুর্বল হওয়ায় কৃষকরা ধান বিক্রি করে ন্যায্য দাম পান না। ভাড়া আর সময়ের খরচে লাভের বড় অংশ হারিয়ে যায়।’
খালিয়াজুরী বাজারের ব্যবসায়ী সোহান-বিন-নবাব যোগ করেন, ‘সরকার প্রতি বছর এখানকার জলমহাল ইজারা দিয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। অথচ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি-উড়াল সড়ক নির্মাণে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।’
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অঞ্জন দেব রায় জানান, ‘খালিয়াজুরীতে উড়াল সড়ক স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে প্রায় আড়াই বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে। এ প্রস্তাবটি পাঠানোর আগে তার নেতৃত্বে কয়েক জন প্রকৌশলী এসে সড়ক স্থানটি পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি।’
অন্যদিকে নেত্রকোনার নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘খালিয়াজুরীতে এমন কোনো প্রকল্প আছে কি না, তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।’




