চট্টগ্রামে সাপের অতি উপদ্রব, পাঁচ মাসে ১৫ মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামের ৯ উপজেলায় গত পাঁচ মাসে বিষধর সাপের কামড়ে নারী-শিশুসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগে জেলার তিনটি উপজেলাকে বিষধর সাপের অতিউপদ্রব আক্রান্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। গত পাঁচ মাসে তা বেড়ে ৯টি উপজেলায় উত্তীর্ণ হয়েছে। গত অক্টোবর মাসেই আনোয়ারা, বোয়ালখালী, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপ এই চার উপজেলায় বিষধর সাপের ছোবলে প্রাণ হারিয়েছে চার জন। এদিকে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুসারে জানা যায়, সারা দেশের মধ্যে সাপের কামড়ের ঘটনা চট্টগ্রামেই সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিলেট।

আগে বিষধর সাপের অতিউপদ্রব আক্রান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে ছিল বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও বাঁশখালী। বর্তমানে এই তালিকায় যুক্ত আরো ছয় উপজেলা হচ্ছে—পটিয়া, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ। সাপের কামড়ে আক্রান্তদের কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় পথেই মারা গেছে। অনেকের মৃত্যু হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নেওয়ার পর। কেউ-বা ছোবল খাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছে। চিকিত্সকদের অভিযোগ, সাপের কামড় খাওয়ার ঘটনাটিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেরিতে হাসপাতালে আসার কারণে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৩ অক্টোবর বোয়ালখালীর বিদ্যুিমস্ত্রি বাবুল (৪২), ১২ অক্টোবর সন্দ্বীপ মগধরা ইউনিয়নের পলি বেগম (২৮), ১০ অক্টোবর বাঁশখালীর বাহারছড়া গ্রামে শিক্ষিকা মুনতাহা বিনতে হাবিব (৩৩), ২ অক্টোবর আনোয়ারা লামার বাজারে শিশু জাহেদুল ইসলাম (১১), ২ সেপ্টেম্বর পটিয়ার বরলিয়ায় গৃহবধূ ফেরদৌস বেগম (৩৫), ৩ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ডের পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের শিক্ষিকা গোপা ঘোষ (৪৫), ১ আগস্ট লোহাগাড়ার পুটিবিলা এলাকায় কিশোর মো. তওসিফ (১৬), একই দিন আনোয়ারা উপজেলার সারেঙ্গা গ্রামে কিশোরী নাঈমা আকতার (১৩), ২৮ আগস্ট মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়ায় শিশু মোছাম্মাত্ ফাবিহা, ৩১ আগস্ট চন্দনাইশের বরকলে কিশোরী জোহরা আকতার (১৩), ৫ আগস্ট রাতে বোয়ালখালীতে পলিটেকনিক ছাত্র আরমান তালুকদার (১৮), ২০ জুলাই লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোহাম্মদ তারেক (৩৪); একই দিন আনোয়ারা উপজেলার ভিংরোল গ্রামে মুনতা মনসুর মাহি (১১), ২০ জুন মিরসরাইতে পোশাক শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও ২৮ মে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারি ঈদপুকুরিয়া গ্রামে আবদুর মালেক (৫৫) সাপের কামড়ে প্রাণ হারান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ইব্রাহিম হায়দার খলিল ইত্তেফাককে বলেন, সাপের কামড়ের পরিসংখ্যানে চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ। তার মধ্যে সাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিংবা সাপ ধরার সময় ছোবল খেয়েছে এরকম স্নেইক বাইটের রেকর্ডও আছে। চট্টগ্রামে যে সাপটির কামড়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে, সেটির নাম ‘পদ্ম গোখরা’। বিজ্ঞানীরা এই সাপটির নাম দিয়েছেন ‘মনোক্রেট স্নেইক’।

এদিকে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম ইত্তেফাককে বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটিতে অন্তত দুজন সাপের কামড়ে আহত মানুষকে চিকিত্সা করা যায়, এমন ২০ ভায়াল করে এন্টি-ভেনম মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে। আর আমাদের কাছে মোট ৩০০ ভায়াল এন্টি-ভেনম মজুত রয়েছে।’

চট্টগ্রামে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নূরজাহান বেগম ইত্তেফাককে বলেন, যেভাবে চট্টগ্রামে পাহাড়-বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে, তাতে বিষধর সাপেরা তাদের আবাস হারিয়ে শহর- উপশহরে বাসাবাড়ি, গাড়ির গ্যারেজ, খড়ের গাদা, খামারসহ নানা স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। এতে সর্পদংশনের ঘটনা বাড়ছে।

Related Articles

Back to top button