সাইবার সহিংসতার মুখে নারীরা

অনলাইন ডেস্ক: ডিজিটাল প্রযুক্তি আজ সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। তবে এই পরিবর্তনের মধ্যে নারীরা একধরনের নতুন সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা দৃশ্যমান নয়, কিন্তু গভীরভাবে সামাজিক। অনলাইনে নারীরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন সাইবার বুলিং, যৌন হয়রানি, ফটো ম্যানিপুলেশন, ডক্সিং ও ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মতো অপরাধের। বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের তথ্য বলছে, অনলাইন হয়রানির শিকারদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই নারী।
২০২৫ সালের হিসেবে জাতিসংঘ বলছে, আরব অঞ্চলে ৬০ ভাগ নারী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনলাইন ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছেন। পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার ১২ দেশে ১৮ বছরের বেশি ৫০ ভাগ নারী প্রযুক্তিনির্ভর সহিসংতার শিকার হচ্ছেন। সাবসাহারান এলাকার ৫টি দেশের ২৮ ভাগ নারী অনলাইন ভায়োলেন্সের মুখে পড়ছেন। ডেনমার্ক, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ থেকে ৫। বছরের ২৩ শতাংশ নারী একবার হলেও অনলাইন হ্যারাসমেন্টের শিকার হন।
সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে, ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে মানহানি, ব্যক্তিগত ছবি বিকৃতি ও অশালীন কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া, মেসেঞ্জারে অশালীন বার্তা বা হুমকি দেওয়া, ব্ল্যাকমেইল ও রিভেঞ্জ পর্নের শিকার। এ ধরনের অপরাধ কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ নয়। পুরো সমাজের গঠন, মূল্যবোধ ও প্রযুক্তি একত্রে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে। নারীর অনলাইন উপস্থিতি যত বাড়ছে, ততই তার ডিজিটাল পরিচয় ছবি, কণ্ঠ, তথ্যকে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় ব্যবহার করা হচ্ছে। নারীর ব্যক্তিগত তথ্য ফোন নম্বর, ছবি, এমনকি অবস্থান সহজেই ঝুঁকিতে পড়ছে। নারীর গোপনীয়তা ও আত্মসম্মান দুই-ই এখন প্রযুক্তির হুমকির মুখে। প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সংস্কৃতি এখন দেশে নারীর শরীর ও পরিচয়কে একধরনের ডেটায় রূপান্তর করছে। নারীর তথ্য পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট বা ডিপফেইক ভিডিওর মাধ্যমে নতুন ধরনের সহিংসতা তৈরিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী নারীরা অনেকেই ভয়ে পরিবার বা সমাজের কাছে ঘটনা প্রকাশ করতে পারেন না, ফলে ট্রমা গভীরতর হয়। নারী নিজেও অনিচ্ছায় সামাজিক চাপের মাধ্যমে নীরবতা বজায় রাখে। বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০২৪), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের সুযোগ আছে। এছাড়া ৯৯৯, সাইবার হেলপ ডেস্ক ও এটুআই উইমেন সেফটি সেল থেকে সহায়তা নিতে পারেন। নারীর অনলাইন নিরাপত্তা শুধুমাত্র আইনের বিষয় নয়, এটি ডিজিটাল লিটারেসি ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তনের বিষয়ও। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন স্কুল-কলেজে ডিজিটাল সেফটি শিক্ষা, নারীদের জন্য সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ।




