তিন বছরেও চালু হয়নি ওজন স্কেল, বছরে গচ্চা সোয়া ২ কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক: ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ) আওতায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে ২০২২ সালে ওজন স্কেল হস্তান্তর করা হলেও গত তিন বছরেও চালু করা যায়নি। বেনাপোল ট্রাক মালিক সমিতি, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বাধার মুখে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় অসহায় হয়ে পড়েছেন স্কেলটির ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আনসার সদস্যরা।
স্কেল পরিচালনায় নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউডিসি কনস্ট্রাকশন বলছে, সড়কে পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো সহযোগিতা না করায় তারা সেবা দিতে পারছেন না। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোমরা, মোংলা ও নওয়াপাড়া বন্দর সড়ক বাদ রেখে বেনাপোল স্থলবন্দর সড়কে স্কেল চালু করায় এ রুটে বাণিজ্য কমার আশঙ্কায় স্কেল ব্যবহারে তাদের আপত্তি রয়েছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন বন্ধে বেনাপোল এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন পরিচালনায় সরকারের খরচ বছরে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকচালকরা সড়ক আইন না মেনে ওভারলোড করে গাড়ি চালানোয় অল্পদিনেই সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে সড়কে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনা। জাপানি সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সুরক্ষায় বেনাপোল পৌর গেট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ওয়েস্কেল স্থাপন করে। গতবছরের ১৫ আগস্ট ওয়েস্কেল পরিচালনায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইউডিসিকে টেন্ডার দেয় সরকার। গতবছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও কর্মচারীসহ স্কেল পরিচালনায় ৪২ জন কাজ করছেন। নিরাপত্তায় রয়েছেন সাত জন আনসার সদস্য।
২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ওয়েস্কেলটি পুরোদমে চালু করতে ‘অংশীজনী সভার’ আয়োজন করে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নির্ধারিত দিনে সেখানে উপস্থিত হন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে বেনাপোলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের আপত্তির মুখে অনেকটা নিরূপায় হয়ে স্কেল কার্যক্রমের উদ্বোধন না করেই ফিরে আসে সওজ কর্তৃপক্ষ।
অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে প্রথম টনে ৫ হাজার ও দ্বিতীয় টন প্রতি ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। তবে স্কেলে অতিরিক্ত পণ্য শনাক্ত হলেও জরিমানা আদায় বা ওভার লোড বন্ধে কোনো প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ যেমন বিফলে যাচ্ছে, তেমনি অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে সড়ক নষ্ট হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জমান সনি বলেন, ‘আমরা ওয়েস্কেলের বিরুদ্ধে না। কিন্তু এ অঞ্চলের আরো তিনটি বন্দর ভোমরা, নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দরে ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেল স্থাপন করা হয়নি। সেক্ষেত্রে বেনাপোলেরটা চালু করা হলে এই বন্দর কেউ ব্যবহার করবে না। শিকার হবেন বেনাপোলবাসী। আমরা তা মানতে পারি না।’
নাভারন হাইওয়ে পুলিশের ওসি রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ট্রাকগুলোতে অতিরিক্ত পণ্য বহন করলেও কোনো ওজন স্লিপ না থাকায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ওজন স্কেলটি পুরোদমে চালু করতে সময় লাগছে। তবে এটি চালু করতে বাধাদানকারীদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। দ্রুতই চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।




