রেলের ইঞ্জিন সংকটে বিঘ্নিত যাত্রীসেবা, পণ্য পরিবহন

  • ইঞ্জিন সংকটে এক মাসেই বাতিল হয়েছে ৪৩৫ যাত্রা 
  • চীন থেকে অনুদান আসছে ২০ ইঞ্জিন

অনলাইন ডেস্ক: পুরোনো ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) কারণে রেল চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বর্তমানে রেলওয়ের বহরে ৩০৬টি লোকোমোটিভ আছে। এর মধ্যে ১৭৪টি মিটারগেজ ও ১৩২টি ব্রডগেজ। এর মধ্যে ১২৪টি এমজি লোকোমোটিভ অর্থাৎ ৭১ শতাংশ নকশাগত আয়ুষ্কাল পার করেছে। ৬৮টি ইঞ্জিন ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এবং ৮৪টি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহার হচ্ছে। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পুরোনো ইঞ্জিন সচল রাখা কঠিন, খরচ বেশি।

লোকোমোটিভ ( ইঞ্জিন) ও কোচ সংকটের কারণে সারা দেশে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বে বন্ধ রয়েছে ৭০টি ট্রেন । এর মধ্যে ৩৩টি কমিউটার ট্রেন, ২১টি লোকাল, ১০টি মিশ্র, চারটি মেইল ও দুটি শাটল ট্রেন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইঞ্জিন ও কোচ সংকট এবং জনবল স্বল্পতার কারণে সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

ইঞ্জিনের অভাবে প্রতিদিন একাধিক যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন বাতিল হচ্ছে। গত জুন মাসে রেলের পূর্বাঞ্চলে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও মালবাহী মিলিয়ে ৪৩৫টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। এছাড়া ১ হাজারের বেশি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালে পড়ে আছে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাও বাতিল হতে পারে, যা যাত্রীর ভোগান্তি বাড়াবে এবং আয় কমাবে।

রেলকর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এমন সংকট অবস্থায় আশার আলো, সরকার চীনের কাছ থেকে ২০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে, যা দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের। চীন এই ইঞ্জিনগুলো পুরোপুরি বিনা পয়সায় বা অনুদান হিসেবে সরবরাহ করবে। এ জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে। রেল সূত্র আশা করছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে চীনের এই অনুদান পাওয়া যাবে।

রেলের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, মিটারগেজ ইঞ্জিনের সংকট বেশি। চীনা অনুদান এলে তা রেলের জন্য খুবই উপকারী হবে। চীনা অনুদানে পাওয়া ইঞ্জিনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। আলোচনা চলছে। আমরা শতভাগ আশাবাদী।

২০২০ সালের জানুয়ারির ওয়ার্কিং টাইম টেবিল অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাট বিভাগে এমজি রুটে ২০৩টি লোকোমোটিভ প্রয়োজন ছিল, কিন্তু বর্তমানে সক্রিয় আছে মাত্র ১৮২টি। ফলে অন্তত ২১টির ঘাটতি রয়েছে। নতুন ২০টি চীনা লোকোমোটিভ এলে যাত্রী ও মালবাহী পরিবহনে নতুন সেবা চালু করা সম্ভব হবে, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও জ্বালানি ব্যয় কমবে এবং আধুনিক ইঞ্জিন নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য চলাচল নিশ্চিত করবে।

বর্তমানে রেলের ইঞ্জিন আসে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কোরিয়া, ভারতসহ ৯টি দেশ থেকে। চীন থেকে এখনো ইঞ্জিন আসেনি, তবে কিছু কোচ আমদানি হয়েছে। চীনের অনুদান এলে তারা দশম দেশ হিসেবে রেলের ইঞ্জিন সরবরাহকারী হবে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে মিটারগেজ ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বগুড়া, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ আরও কিছু জেলায় মিটারগেজ ট্রেন চলে। খুলনা ও রাজশাহীতে ব্রডগেজ ট্রেন চলাচল করে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, পূর্বাঞ্চল রেলে বন্ধ রয়েছে মোট ৩২টি ট্রেন। ইঞ্জিন সংগ্রহের জন্য রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, ‌মিটার গেজ ও ব্রড গেজ মিলিয়ে সারা দেশে এখন ৯০টির মতো ইঞ্জিন প্রয়োজন। অনুদানের পাশাপাশি নতুন ইঞ্জিন কেনার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে এডিবির অর্থায়নে মিটার গেজের জন্য ৩০টি ইঞ্জিন কেনার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’ বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করতে সবার আগে নতুন ইঞ্জিন সংগ্রহ করা জরুরি বলে মনে করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য বলছে, সারাদেশে মোট ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫৮টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৬২টি। কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল করে ১২৮টি। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৬০টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে চলে ৬৮টি। এছাড়া সারা দেশে আটটি কনটেইনার ট্রেন এবং ১৯টি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। সব মিলিয়ে বর্তমানে চালু আছে ২৭৫টি ট্রেন।

Related Articles

Back to top button