রংপুরে সারজিস আলম

’গণহত্যার বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে সরকারকে শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে হবে’

অনলাইন ডেস্ক: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, বিপ্লবীদের নিরাপত্তা ও গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত না করে কেবল দায়সারা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

এনসিপির রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটির সঙ্গে সমন্বয়ক সভা শেষে রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নগরীর পুলিশ হলরুমে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, বিমান বন্দরের ঘটনা হাজার-হাজার পরিবারকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। একজনের প্রতি সুশীলতা প্রকাশ করতে গিয়ে হাজার পরিবারের সাথে অন্যায় করতে পারি না। সরকারকে একটু শক্ত ও দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নিতে দেখতে চাই। তাহলে নির্বাচনকালীন তাদের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের আস্থা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের দুর্দশার অবস্থা এখন চরম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে যে সম্মানী প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকায় আপাতত সমস্যা নেই, কিন্তু জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত না করে, খুনি হাসিনাসহ গণহত্যা ও মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন, শাপলা চত্বর আন্দোলন ও বিডিআর বিদ্রোহের বিচার না করে, শহীদ পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে যদি দায়সারা নির্বাচন দেওয়া হয়, তাহলে সরকারকে প্রথমে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের মুখোমুখি হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন হয়নি—ছাত্র ও জনতাই তার পতন ঘটিয়েছে। সরকারকে অনুরোধ করবো, গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যু সমাধানের পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করুন। শুধুমাত্র নির্বাচনের কথায় মনোযোগ দিলে জনগণের কাছে সরকারের আস্থা ও ইমেজের সংকট তৈরি হবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সারজিস আলম বলেন, দেশের মানুষ—যে দলেই থাকুক না কেন—জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়ন চায়। বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে ৬-৭টি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, যা নিয়ে আমাদের কোনো বিরোধিতা নেই। প্রশ্ন হলো, গণভোটে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতায় আসা দলগুলো কি সেই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে? এই বিষয়ে জনগণের পরিষ্কার জবাব দরকার। সরকার যদি বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যায়, তাহলে জনগণ তার বিপক্ষে অবস্থান নেবে এবং এনসিপি জনগণের পাশে থাকবে।

শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপি শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনড়। কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও যদি নির্বাচন কমিশন স্বৈরাচারী আচরণ করে, প্রভাবিত হয় বা স্বেচ্ছাচারিতা দেখায়, তাহলে এনসিপি রাজনৈতিকভাবে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এনসিপির প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। আইনজীবীরাও জানিয়েছেন, শাপলা প্রতীক দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলছি—এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।

সাংগঠনিক বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, আমরা জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে চাই। আগামী নভেম্বর বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। এতে করে দল আরও শক্তিশালী হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপি রংপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ গালিব, মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী সাদিয়া ফারজানা দিনা, নেতা আলমগীর নয়ন, আলমগীর হোসেনসহ অনেকে।

Related Articles

Back to top button