জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন

লক্ষ্মীপুরে মা-মেয়েকে হত্যার পর স্বর্ণালংকার নিয়ে পালান যুবক

অনলাইন ডেস্ক: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যার পর স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান পারভেজ নামে এক যুবক। পারভেজ হত্যাকাণ্ডের শিকার মীম-এর ফুফাতো ভাই।

গতকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ঢাকার তুরাগ থানার মনিরের গ্যারেজ থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ৯ দিনের মাথায় এই জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচিত হয়।

এর আগে গত ৯ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর চন্ডিপুর এলাকায় ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী মিজানের বাসভবনে ঢুকে তার স্ত্রী জুলেখা বেগম (৫৫) ও তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তানহা আক্তার মীমকে (১৯) গলা কেটে করে হত্যা করা হয়। এ সময় লুটে নেওয়া হয় ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, রামগঞ্জ থানায় মা ও মেয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূলহোতা পারভেজ নিহত মীম-এর ফুফাতো ভাই। পারভেজ দুইমাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। গত দুইমাস ধরে টাকার অভাবে ছিলেন তিনি। একদিকে এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি অন্যদিকে ব্যাংকে রাখা নিজের টাকা তুলতে পারছিলেন না তিনি।

অভাবের তাড়নায় মামার বাসা থেকে স্বর্ণালংকার নিয়ে আসার চিন্তা ভাবনা করেন। গত ৯ অক্টোবর রামগঞ্জ থেকে একটি চাকু কিনে দুপুর তিনটা থেকে সোয়া তিনটার সময় মামার বাড়িতে প্রবেশ করেন। প্রথমে মামি ও মামাতো বোন মীম তাকে আমড়া ও আপেল খেতে দেয়। তারপর সে মীমের সঙ্গে বাসার দ্বিতীয় তলায় যায়। মীম তার সঙ্গে থাকা চাকু দেখে চিৎকার দিলে তার সাথে মীমের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পারভেজ মীমের শরীরের বিভিন্ন অংশ ও গলায় চাকু দিয়ে অনেকগুলো আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

ওই সময় তার মামি নিচে ছিলেন। মামিকে নিচে এসে পারভেজ এসে বলে, মীম আপনাকে দ্বিতীয় তলায় ডাকে। উপরে যেতেই পেছনে থেকে প্লেট নিয়ে তার মাথায় আঘাত করে টি-টেবিল দিয়ে আবারও আঘাত করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ঘাড়ে ও গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করেন পারভেজ।

দুজনকে হত্যার পর পারভেজ সরাসরি লক্ষ্মীপুরে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে আসে। পরে লক্ষ্মীপুরের দুটি দোকানে অনুমানিক ১ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করে দেয়। বাকি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঢাকায় গেলে সেখানে অনুমানিক ৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ লক্ষ্মীপুর জেলার ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় পারভেজ।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হবার পর থেকে রামগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে ও ডিবির একটি টিম পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তদন্ত কাজে সহায়তা করে। নিবিড় তদারকির মাধ্যমে তদন্তকালে বিভিন্ন ব্যক্তির বক্তব্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, প্রযুক্তিগত প্রমাণ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় পুলিশ।

Related Articles

Back to top button