প্রকৃত আসামি পলাতক, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটছেন নুর

আঙ্গুলের ছাপ নিতেই ধরা

অনলাইন ডেস্ক: মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি জোবাইদ পুতিয়ার পরিবর্তে জেল খাটছেন নুর মোহাম্মদ নামের অন্য একজন নকল (প্রক্সি) আসামি। আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পর আসামির আঙ্গুলের ছাপ নিতেই বিষয়টি ধরা পড়লে এ নিয়ে আদালত ও কারাগারে তোলপাড় শুরু হয়।

জোবাইদ পুতিয়া (৩৫) কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার নাইট্যমপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে এবং নুর মোহাম্মদ (৩৩) টেকনাফ পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফকির আহাম্মদের ছেলে। গত ১২ আগস্টের এমন ঘটনা গত মঙ্গলবার থেকে প্রকাশ্যে আসে এবং বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্ল্যাহেল আল-আমিন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নকল আসামি নুর মোহাম্মদ বুধবার পর্যন্ত এ কারাগারে বন্দি আছেন।

কুমিল্লা আদালত ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার একটি মাদক মামলায় জোবাইদ পুতিয়ার ঠাঁই হয় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ঐ বছরের ৯ আগস্ট থেকে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি। এরপর জামিনে মুক্ত হলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। অভিযোগপত্র দাখিলসহ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ২০১৮ সালে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হয়।

এরপর চলতি বছরের ১২ আগস্ট কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএইচএম আবাদের মাধ্যমে ঐ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জোবাইদ পুতিয়া পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। কিন্তু পরদিনই কারাগারে বন্দির তালিকা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট (আঙ্গুলের ছাপ) ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণাদি অনুযায়ী প্রকৃত আসামি জোবাইদ পুতিয়ার স্থলে নুর মোহাম্মদের কারাবাসের বিষয়টি কারাসংশ্লিষ্টদের নিকট ধরা পড়ে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকৃত আসামি জোবাইদ পুতিয়ার নিকট থেকে নুর মোহাম্মদ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটতে এসেছেন। তাকে জোবাইদ পুতিয়ার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কারাগারে যাওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই তাকে জামিনে বের করে নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় কারাগারে আসা নুর মোহাম্মদের আইনজীবী এএইচএম আবাদ বলেন, ‘আমি ঐ আসামিকে নাম জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সে আমাকে বলেছিল সে জোবাইদ পুতিয়া। আমি এর আগে তাকে কখনো দেখিনি। এনআইডি কার্ড চেয়েছিলাম। সে বলেছে, সে প্রবাস থেকে এসেছে। তার কাছে এনআইডি কার্ড তাৎক্ষণিক ছিল না, পরে দেবে। কিন্তু পরে এমন ঘটনা শুনে আমি নিজেই হতবাক। আমার দীর্ঘ আইনজীবী ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা ঘটেনি। একজন সহকারী এই আসামিকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। আমি তাকে বিশ্বাস করে এনআইডি যাচাই ছাড়াই আদালতে হাজির করি। এটা আমার বড় ভুল হয়েছে।’

কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, আসামি নিয়ে এমন ঘটনা চলতে থাকলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এখন আসল আসামিকে গ্রেপ্তারের করে আদালতে সোপর্দ করলে সব জটিলতার অবসান হবে। তবে এনআইডি কার্ড যাচাই করলে এমন ঘটনা ঘটতো না। মামলা পরিচালনায় সকলকে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলা সুপার হালিমা আক্তার বলেন, আদালত থেকে আসা যেকোনো আসামিকে কারাগারে প্রবেশ করানোর আগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। এতে আসামির নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার সময় দেখি, ঐ ব্যক্তির নাম-পরিচয় আর আদালত থেকে আসা নাম-পরিচয়ের সঙ্গে মিল নেই। পরে ১৪ আগস্ট বিষয়টি আমাদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কারা কর্তৃপক্ষ ও আদালতে জানানো হয়। এখন আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে আসামি কারাগারে আছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাই না।

Related Articles

Back to top button