দাকোপে পানীয় জলের তীব্র সংকট, বৃষ্টির পানিই ভরসা

অনলাইন ডেস্ক: খুলনার উপকূলীয় দাকোপ উপজেলায় দীর্ঘদিন যাবৎ সুপেয় খাওয়ার পানির সংকটে ভুগছে হাজারো পরিবার। লবণাক্ত ও আর্সেনিক দূষিত পানির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভূগর্ভের পানির ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ায় এখন একমাত্র অবলম্বন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ। আর এই নিরাপদ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ভরসা পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং (ট্যাংকি)। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই ট্যাংকি স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় মোট ৭ হাজার ৫৬০টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাংকি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৮২৬টি ট্যাংকি। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগেও আরও প্রায় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ট্যাংকি বিতরণ হয়েছে। অনেকে আবার ব্যক্তিগতভাবে বা কিস্তিতে কিছু ট্যাংকি সংগ্রহ করেছেন। তা ছাড়া লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের কারণে টিউবওয়েল স্থাপন কার্যত অসম্ভব। জানা গেছে ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার এবং পরিবারসংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। নিরাপদ পানির সংকট নিরসনে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ৩ হাজার লিটার পানির ট্যাংকি প্রয়োজন।
কালাবগি এলাকার রুমানা খাতুন, শ্রীনগর এলাকার নমিতা রায়, গুনারী এলাকার চৈতালী সরদার, খেজুরিয়া এলাকার রুপা মন্ডলসহ আরও অনেকে জানান, আগে দূর-দূরান্ত থেকে পুকুরের পানি এনে খেতে হতো। অনেক সময়ে বিশুদ্ধ পানি কিনেও আনতে হতো। এখন বাড়ির আঙিনায় সরকারের দেওয়া ৩ হাজার লিটার ট্যাংকি থাকায় সেই ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে। বিশেষ করে আমরা মহিলারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি।
তারা মনে করেন দীর্ঘ দিনের পানির সংকট মোকাবিলায় ট্যাংকি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। তবে নিরাপদ পানির টেকসই সমাধানের জন্য এরকম প্রকল্পের সম্প্রসারণ এবং বেশি বেশি ট্যাংকি বরাদ্দ জরুরি।
পানখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছাব্বির আহমেদ বলেন, এই উপজেলা দেশের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর লবণাক্ততার কারণে এখানে খাওয়ার পানির সংকট আরও বাড়ছে। ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিক ও লবণ থাকায় টিউবওয়েল বসানো সম্ভব নয়। তাই রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংই এখানকার মানুষের একমাত্র ভরসা। ফলে সুপেয় খাওয়ার পানির সংকট নিরসনে পরিবার প্রতিটি একটি করে ট্যাংকি প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইত্তেফাককে জানান, এই উপজেলায় লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের কারণে টিউবওয়েল কার্যকর নয়। তাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণই এখানকার মানুষের একমাত্র নিরাপদ সমাধান। রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ট্যাংকগুলো জলবায়ুসহিষ্ণু করে তৈরি করা হয়েছে। আমার পরামর্শ হলো প্রতিটি পরিবার যেন ট্যাংকের পানি ব্যবহারে সচেতন হয় এবং নিয়মিত পরিষ্কার রাখে। সংরক্ষিত পানিকে ঢেকে রাখা, সময়মতো ব্যবহার করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে এ পানি সারা বছরই নিরাপদ থাকবে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এনজিও ও ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা মিলিয়ে ইতিমধ্যেই নিরাপদ পানি সংরক্ষণে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। তবে চাহিদা এখনো অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করছি ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে এবং আরও নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে।




