এখনই যাচ্ছে না এনসিপি

বিএনপির বিপরীতে চার দফার যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি, নেতৃত্বে জামায়াত

চার দফা দাবি: ১. অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ২. জাপার রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ৩. পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষে নির্বাচন ৪. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি

অনলাইন ডেস্ক: জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির বিপরীতে এই যুগপৎ কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি ও সরওয়ার কামাল আজিজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। এই আন্দোলন প্রক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রথমে সক্রিয় থাকলেও গতকাল তারা সিদ্ধান্ত বদল করেছে।

একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুগপৎ কর্মসূচিতে যাওয়ার লক্ষ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে দলগুলো। বৈঠকে চার দফা চূড়ান্ত করা হয়। জুলাই সনদের স্বীকৃতি আদায়ে মূলত বিএনপি ও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই জামায়াতের নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে যাচ্ছে দলগুলো। যদিও বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, মহান মুক্তিযুদ্ধকে ২৪ অভ্যুত্থানের সমান্তরাল করার কোনো প্রচেষ্টাকে তারা সমর্থন করে না। পাশাপাশি সংবিধানে যুক্ত করার বিষয়ে নির্বাচিত সংসদেই সবকিছু নির্ভর করছে। অন্য কোনো বিকল্পে সম্মত নয় বিএনপি।

জানা গেছে, সমমনা দলগুলো কর্তৃক ঘোষিত যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি দল পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ইসলামী আন্দোলন আগামীকাল সোমবার পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচির ঘোষণা দেবে। অন্য দলগুলোও পর্যায়ক্রমে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে, সাধারণভাবে সেগুলো অগ্রহণযোগ্য এবং যৌক্তিক নয়। আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গায় যেতে পারলে বিএনপি সবচেয়ে খুশি হবে। কারণ, এই অনিশ্চয়তা বেশি দিন অব্যাহত রাখা যাবে না। আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নামেমাত্র একটা সংস্কার হলে হবে না।

সংস্কারের আইনি ভিত্তি তৈরি অপরিহার্য বিষয়। যার ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন যেন হয় এবং সেটি নিশ্চিতভাবে এই সময়ে যদি করতে হয়, তাহলে এটার আইনি ভিত্তি দিতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমমনা আট দল কর্তৃক ঘোষিত যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি দল পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কর্মসূচি ঘোষণা করবে। চারটি দাবি হচ্ছে—জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন; আওয়ামী লীগের দোসর ও আধিপত্যবাদী ভারতের এ দেশীয় এজেন্ট জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ; আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন; আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি।

এনসিপি এখনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি:

এদিকে এনসিপির ফেসবুক পেজে দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব স্বাক্ষরিত এক পোস্টে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনো কোনো জোট বা যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের যে দাবি সেটির সঙ্গে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছিল কিন্তু পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয় এনসিপির কোনো অবস্থান নেই। বরং এনসিপি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে একমত। এছাড়া সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের দাবির সঙ্গে এনসিপির সমর্থন থাকবে।

জুলাই সনদের ভিত্তি-পিআর পদ্ধতির দাবিতে সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে: চরমোনাই পীর

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, আমাদের দাবি সুস্পষ্ট—জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই, এর আইনি ভিত্তি চাই। দ্রুততার সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করতে চাই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন বন্ধ করতে চাই। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। আমাদের অবস্থান কোনো দলের বিরুদ্ধে না। বরং জুলাই অভ্যুত্থানের রক্ত ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এই অবস্থান।’

গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান। সোমবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবির পক্ষে দলীয় কর্মসূচি তুলে ধরা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়। চরমোনাই পীর বলেন, ‘২৪-এর জুলাইয়ে দেশ থেকে স্বৈরতন্ত্রকে চিরতরে উৎখাত করার জন্য ছাত্র-জনতা রক্ত ও জীবন দিয়েছে। হাসিনার পলায়ন সেই চাওয়ার একটা অংশ। পরের কাজ ছিল—সংবিধান, আইন ও রাজনৈতিক সংস্কার করে দেশে স্বৈরাচার সৃষ্টির সম্ভাব্য সব পথ রুদ্ধ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন না করে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করেই যেনতেন উপায়ে নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবারও পুরোনো অশুভ আবর্তে নিক্ষেপ করার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় স্বৈরাচারবিরোধী সব রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তি একত্রিত হয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, জুলাইয়ে নিহত পরিবারগুলোতে শোক এখনো বহমান, আহতদের ক্ষত এখনো শুকায়নি। অথচ ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজে কোনো গতি নেই। ফ্যাসিবাদের প্রমাণিত দোসররা উদ্ধতভাবে রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দিচ্ছে। এত রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত জুলাইয়ের সনদ নিয়ে নয়-ছয় করা হচ্ছে। পুরোনো বন্দোবস্তে নির্বাচন আয়োজনের তোড়জোড় চলছে।

চরমোনাই পীর বলেন, সামগ্রিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, জুলাইয়ের আত্মত্যাগ ম্রিয়মাণ হতে চলছে। আমরা এটা হতে দিতে পারি না। তাই জুলাইয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে যে সাহসিকতা ও ঝুঁকি নিয়ে নেমেছিলাম সেই প্রতিজ্ঞায় আবারও মাঠে অবস্থান নেব।

Related Articles

Back to top button