ঐতিহ্যের সাক্ষী ৫০০ বছরের পুরাতন সোনামসজিদ

অনলাইন ডেস্ক: সাড়ে পাঁচশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহনকারী গৌড় নগরীর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সোনামসজিদ, উত্তরবঙ্গ তথা সারা দেশের ইসলামি স্থাপত্যের অন্যতম গৌরব। মধ্যযুগীয় সুলতানি আমলের এ স্থাপনাটি বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছেও একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিশ্বরোড মোড় থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে। সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পাশে মহাসড়কের ডান দিকে, একটি বড় দিঘির পাড়ে মসজিদটি অবস্থিত। সিএনজি, অটোরিকশা বা যেকোনো যানবাহনে মাত্র এক ঘণ্টায় এখানে পৌঁছানো যায়।
মসজিদটি নির্মিত হয় বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিঃ) এর শাসনামলে। এর নির্মাতার নাম ওয়ালি মুহাম্মদ, যিনি মসজিদের শিলালিপিতে উল্লেখিত।
প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইলস। তবে পাথরের খোদাই কাজই এখানে প্রধান বৈশিষ্ট্য। মসজিদের বাইরের পরিমাপ ৮২x৫২.৫ ফুট, ভিতরের পরিমাপ ৭০.৪x৪০.৯ ফুট এবং উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। ছাদে রয়েছে মোট ১৫টি গম্বুজ—১২টি গোলাকার ও ৩টি চৌচালা। চৌচালা গম্বুজগুলোর ভিতরে রয়েছে গোলাপ ফুলের কারুকাজ।
চার কোণে রয়েছে অষ্টকোণাকৃতির চারটি বুরুজ। মসজিদের সম্মুখে রয়েছে ৫টি দরজা, দুই পাশে ৩টি করে মোট ১১টি দরজা। প্রতিটি দরজা ও পাশের দেয়ালে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন খোদাই।
মসজিদের ভিতরে রয়েছে কালো ব্যাসান্ট পাথরের ৮টি স্তম্ভ, যেগুলো তিনটি আইল ও পাঁচটি সারিতে ভাগ করা। পূর্ব দেয়ালের পাঁচটি দরজার সামনেই পাঁচটি মিহরাব, যার মাঝেরটি আকারে বড়। প্রতিটি মিহরাবেই রয়েছে অলংকৃত খোদাই কাজ। মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি দোতলা কামরা, যেটিকে অনেকে জেনানা মহল আবার কেউ কেউ সুলতানের নামাজ আদায়ের নিরাপদ কক্ষ বলে মনে করেন।
মূল মসজিদে প্রবেশের আগে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন তোরণ, যা ২.৪ মিটার চওড়া ও ৭.৬ মিটার উঁচু। তোরণের পাশেই একটি উঁচু মঞ্চের ওপর রয়েছে দুটি কবর—ধারণা করা হয় এটি নির্মাতা ওয়ালি মুহাম্মদ ও তার স্ত্রী অথবা পিতা আলির।
মসজিদের আঙিনার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হক টুলুর কবর।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও পশ্চিম দেয়াল আংশিক ধসে পড়ে। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার এগুলো সংস্কার করে। তবে কিছু অংশে পাথরের বদলে ইট ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে মসজিদের কিছু স্থানে ফাটল ও গম্বুজে জীর্ণতার চিহ্ন দেখা যায়। প্রতিদিন সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে কাঁপনে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মসজিদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি পার্ক ও রেস্টুরেন্ট। মসজিদের পশ্চিমে রয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্মিত একটি আধুনিক দুইতলা গেস্ট হাউস ও একটি পর্যটন মোটেল।