সাড়ে পাঁচ বছরে সড়কে ঝরেছে ৩৯ হাজার প্রাণ, আহত ৬০ হাজার

অনলাইন ডেস্ক: ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে সড়কে ৩৫ হাজার ৩৩৭টি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে ঘটেছে। এসব মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৮ হাজার ৮০০ মানুষ। আহত মানুষের সংখ্যা ৬০ হাজার ৪৫৩ জন। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে গত মাসে (জুলাই মাসে) দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪৩টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৫৬ জন। বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

কারণ :ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী করছে সংগঠনটি।

১৮ প্রস্তাব: সম্প্রতি এক সেমিনারে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখার আওতায় ১৮টি প্রস্তাব দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি বলছে, এসব সংস্কার প্রস্তাব ২০২৫ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে বাস্তবায়নের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়ক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার ছাড়া প্রাণহানি ও বিশৃঙ্খলা কমানো সম্ভব নয়।

ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তিন ধাপের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, আমরা সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরি করেছি। এতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি তিন ধাপে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বাংলাদেশের সড়কব্যবস্থা বহু স্তরে নৈরাজ্যের মধ্যে রয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দুর্বল অবকাঠামো, সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব এবং জবাবদিহির অভাবের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবসময়ই বেশি থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চালকদের অবহেলা ও অদক্ষতা, দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর চাপ, সড়কে গতিরোধকহীন দীর্ঘ অংশ, যান্ত্রিক ত্রুটি, পথচারীদের অসচেতনতা এবং আইন অমান্য করার প্রবণতা। এসব মিলিয়ে প্রতিদিনই মানুষ সড়কে প্রাণ হারাচ্ছেন কিংবা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে এখনই একটি সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রস্তাবিত রূপরেখার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাস্তবায়ন করতে পারে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে পারবে। রাষ্ট্রের অবহেলা এবং দীর্ঘদিনের অযত্নের কারণে সড়ক খাত আজ ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে, আর এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক কেবল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সম্ভব নয়; বরং মানুষের আচরণে পরিবর্তন, কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ, আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধান পাওয়া যেতে পারে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সিভিল সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

Related Articles

Back to top button